কেলোমাল সন্তোষিণী স্কুলের ১৪০তম প্রতিষ্ঠা বর্ষ ও অনুষ্ঠান ঘিরে উন্মাদনা
বর্তমান | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: সময়টা ১৮৮৫। ব্রিটিশ শাসনে তখন জাতীয়তাবাদের বিকাশের উষালগ্ন। ব্রিটিশ নীতি ও শাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষিত ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এরকম এক প্রেক্ষাপটে এলাকায় শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে অগ্রণী হয়েছিলেন তমলুকের কেলোমালের প্রয়াত জমিদার মন্মথনাথ সরকার। তাঁর উদ্যোগে কেলোমাল সন্তোষিণী হাইস্কুলের পথচলা শুরু হয়েছিল। এলাকার আরও বেশ কয়েকজন এই উদ্যোগে শামিল হন। শুক্রবার তমলুক শহরের উপকণ্ঠে সেই বিদ্যালয়ে ১৪০তম প্রতিষ্ঠা বর্ষ ও বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসব পালিত হল।
১৪০বছরের প্রাচীন এই বিদ্যালয়ের শুক্রবার বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালু হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি) বৈভব চৌধুরী ওই সিস্টেম চালু করে ভূয়সী প্রশংসা করেন। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী সকলের বায়োমেট্রিক হাজিরা হবে। আগামী সোমবার থেকেই এটা কার্যকর হবে। স্কুলের ঢোকার মুখে ওই যন্ত্র বসানো আছে। তার সামনে দিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে প্রত্যেকের হাজিরা নথিভুক্ত হবে। শুধু তাই নয়, ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা নথিভুক্ত হওয়ার মুহূর্তে প্রত্যেকের বাড়ির মোবাইলে এসএমএস পৌঁছে যাবে। এর ফলে স্কুলে যাওয়ার নাম করে ফাঁকি দেওয়ার সম্ভব হবে না। প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় মাজী সহ অন্য শিক্ষকদের উদ্যোগে স্কুলে কিচেন গার্ডেন গড়ে উঠেছে। সেখানে নানা রকমের সব্জি ফলছে। এছাড়াও স্কুলের পুকুরে শিঙি মাছের চাষ হচ্ছে। শুক্রবার স্কুলের ১৪০তম বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসবে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের সব্জি বাগান থেকে তোলা সব্জি খাওয়ানো হয়। উচ্চ মাধ্যমিক এই স্কুলে এখন প্রায় ৭০০পড়ুয়া আছে। এছাড়াও দু’জন পার্শ্বশিক্ষক সহ মোট ২২জন শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সহ পাঠ্যক্রমিক কাজকর্মেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্কুলের তরফে ছাত্রছাত্রীদের ব্রতচারী ও যোগব্যায়াম শেখানো হয়।
২০২১সালে এই স্কুলের ছাত্র শুভদীপ মাইতি উচ্চ মাধ্যমিকে দশম স্থান দখল করে। তমলুক গ্রামীণ এলাকার মধ্যে পঠনপাঠনে এগিয়ে থাকা এই বিদ্যালয়ের বহু প্রাক্তনী আজ দেশ বিদেশের নানা উচ্চ পদে কর্মরত। যেমন, এখানকার প্রাক্তনী পূর্ণচন্দ্র দাস দিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল এগ্রিকালচার রিসার্চের ডিরেক্টর ছিলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিজিওনাল ম্যানেজার কোকিলচন্দ্র মাইতি এই স্কুলেরই প্রাক্তনী। এখানকার বহু প্রাক্তনী আজ নামী চিকিৎসক হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি নানা হাসপাতালে কর্মরত।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ১৪০তম বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ১১টায় ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। বিদ্যালয়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রতিটি ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষা ও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক টেস্টে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীকে পুরস্কৃত করা হয়। ক্রীড়াতে ২৭টি ইভেন্ট ছিল। মোট ৮১জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ২৫টি ইভেন্টে ৭৫জন পড়ুয়াকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিদ্যালয় থেকে সদ্য অবসর নেওয়া সুধাংশুশেখর মান্নাকে এদিনের অনুষ্ঠানে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের তরফে স্কুলের অনুষ্ঠান মঞ্চে ম্যাজিক শো হয়। বিকেলে ব্রতচারী প্রদর্শন, সঙ্গীত এবং শিক্ষার গুরুত্ব বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা নাটক মঞ্চস্থ করে।-নিজস্ব চিত্র