সোমনাথ মাইতি, খেজুরি
ক’দিন বাদেই রঙের উৎসব। গত কয়েক বছর ধরে রাসায়নিক রং–মিশ্রিত আবিরের পাশাপাশি ভেষজ আবিরের চাহিদা অনেকটা বেড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন বাজার সূত্রের খবর। নানা ধরনের ফুল, পাতা ও ভেষজ জিনিস দিয়ে এই আবির তৈরি বেশ কয়েক বছর ধরেই বিক্ষিপ্ত ভাবে শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। তবে এই জেলায় ফুল চাষ ও ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের অভিমত, যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও বিপণনের অভাবে ভেষজ আবির অন্য আবিরের তুলনায় হোলির বাজারে পিছিয়ে রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে উৎপাদন ও বিপণন বাড়াতে পারলে ভেষজ আবির তৈরিকে ঘিরে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হতে পারে গ্রামীণ এলাকায়।
উত্তরোত্তর চাহিদার কথা মাথায় রেখে জেলার ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১০০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভেষজ আবির তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে খেজুরি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি। বিপণনের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে খেজুরি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি জালালউদ্দিন খান বলেন, ‘বিপণনের বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করবে। কলকাতা–সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সরকারি স্টলে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের উৎপাদিত ভেষজ আবির বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।’
যদিও সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, ভেষজ আবির–সহ ফুল থেকে বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য তৈরি পরিকল্পনা স্তরেই থেকে গিয়েছে। যেমন সরকারি ঘোষণামতো পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ভিন্ রাজ্যে ফুল রপ্তানির কাজ শুরুতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি স্তরে একাধিকবার বাড়তি বা অবিক্রীত ফুল থেকে উপজাত দ্রব্য তৈরির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। জেলায় ফুল থেকে উপজাত দ্রব্য তৈরির বড় ইউনিট এখন গড়ে ওঠেনি বলে তাঁর বক্তব্য। তবে তমলুক–সহ বিভিন্ন জায়গায় হোলি এলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভেষজ আবির তৈরি হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তিনি বলেন, ‘ভেষজ আবিরের চাহিদা বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু সঠিক বিপণনের অভাবে ভেষজ আবির যেমন মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না, তেমনই উৎপাদনও বাড়ছে না। বাজারে ভেষজ আবিরের নামে যে আবির বিক্রি হচ্ছে সেই আবির কতটা ভেষজ সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আমরাও চাই ফুল থেকে আবির–সহ উপজাত আরও জিনিস তৈরি হোক।’
খেজুরিতে ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছবি দাস বলেন, ‘১০০ দিনের কাজ বন্ধ। ভেষজ আবির তৈরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’ রামনগরের এক আবির বিক্রেতা হিমাংশু দাসের পরিষ্কার কথা, ‘ভেষজ আবির ভালো। কিন্তু দাম বেশি। এ কারণেই ভেষজ আবিরের বাজার এখনও তৈরি হয়নি। সাধারণ আবির ১৫০ টাকা কিলো প্রতি বিক্রি হলেও ১০০ গ্রাম একটা ভেষজ আবিরের প্যাকেটের দাম ৩০-৪০টাকা। তাই বিশেষ কিছু ক্রেতাদের জন্যে কিছু ভেষজ আবির রাখলেও অন্য আবির বেশি করে রাখতে হয়।’ তা সত্ত্বেও জেলায় ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের আশা, সঠিক বিপণন করতে পারলে এ বারের হোলিতেও সাধারণ আবিরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে ভেষজ আবির।