• অরণ্যের ‘কাব্য’ লিখতে চান পাহাড়ি বিছে
    এই সময় | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: সামাজিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া তার স্বভাব। কাজে নেমে অনেক বাধা এসেছে। তবু থেমে থাকেননি। ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে রাজনীতিতে নেমেছিলেন কলকাতা ময়দানের ‘পাহাড়ি বিছে’। হেরেছেন। একবার নয়, চার বার। তবু কাজ বন্ধ করেননি ভাইচুং ভুটিয়া।

    করোনার সময়েও শিলিগুড়িতে বহু বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এ বার উত্তরবঙ্গকে সবুজে সবুজ করতে মাঠে নামতে তিনি কথা বলেছেন বনকর্তাদের সঙ্গে। জঙ্গল থেকে গাছ কেটে নিয়ে পালানো উত্তরবঙ্গে নতুন বিষয় নয়। তা আটকাতে সচেতনতা শুধু নয়, নিজেও গাছ লাগাবেন ভারতীয় ফুটবলের আইকন। শিলিগুড়ির অদূরে বাগডোগরা-বেঙডুবি বনাঞ্চল কার্শিয়াং ডিভিশনের অন্তর্গত। তথাকথিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল না-হলেও বেঙডুবির জঙ্গল উত্তরবঙ্গে অত্যন্ত পরিচিত।

    সারা বছর এই জঙ্গলে বুনো হাতির যাতায়াত। সেই জঙ্গলেও কয়েক বছর আগে গাছ কাটা শুরু হয়। বনকর্মীদের তৎপরতায় সেই গাছ কাটা বন্ধ হলেও নতুন করে জঙ্গল তৈরির কাজ সে ভাবে শুরু করা যায়নি। সেই কাজে হাত লাগাতে চান ভাইচুং। বৃহস্পতিবার তিনি বাগডোগরা রেঞ্জের আধিকারিক সোনম গিয়াৎসো ভুটিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। আলোচনা হয় কার্শিয়াংয়ের ডিএফও দেবেশ পান্ডের সঙ্গেও। শুক্রবার যোগাযোগ করা হলে ভাইচুং বলেন, ‘বন দপ্তরের অনুমতি মিলেছে। এ বার আমরা খতিয়ে দেখছি, বাগডোগরা কিংবা লাগোয়া এলাকায় কতগুলো গাছ লাগানো সম্ভব। কোথা থেকে চারা সংগ্রহ করা হবে। তার পরেই কাজে নামা হবে।’

    আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সেই দিন ভাইচুং এই কাজে নামতে পারেন বলে বন দপ্তর সূত্রে খবর। আদতে সিকিমের নামচি এলাকার টিঙ্কিটাম গ্রামের বাসিন্দা হলেও শিলিগুড়ির প্রতি বরাবরই তাঁর একটা আলাদা টান রয়েছে। বাইচুংয়ের গ্রাম পিছিয়ে থাকা এলাকা। সেখানে পর্যটনের কথা মাথায় রেখে গ্রামের যুবকদের মোটিভেট করা হয়। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখন ওই গ্রামে গেলে লোকে গ্রামীণ সিকিম দেখতে পাবেন। পাহাড়ি গ্রামের চাষবাস, স্থানীয় খাবার, সংস্কৃতি ইত্যাদি।একটি বেসরকারি সংস্থার উপনগরীতেই এখন তিনি বসবাস করেন। অ্যাসোসিয়েশন অফ কনজ়ারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (অ্যাক্ট) সংস্থার সঙ্গে নানা কাজে যুক্ত তিনি। নিজের গ্রামে পর্যটনের উন্নয়নে ‘গুরুগ্রাম’ তৈরি করেছেন তিনি। সেখানে সিকিমের স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। ফলে ভাইচুংয়ের জন্মভিটেয় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

    এ বার ভাইচুংয়ের লক্ষ্য বাগডোগরার বনাঞ্চল। বাগডোগরার রেঞ্জ অফিসার বলেন, ‘বনাঞ্চল সরকারি হলেও সেখানে অনুমতি সাপেক্ষে সাধারণ মানুষও বৃক্ষরোপণ করতে পারেন। কোনও সমস্যা নেই। এটাই ভাইচুং জানতে এসেছিলেন। আমরা তাঁকে আশ্বাস দিয়েছি। সম্ভবত বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কাজে নামতে চান তিনি।’ ভাইচুং ইদানীং যে সংগঠনের সঙ্গে পর্যটন সহ নানা কাজে জড়িত সেই অ্যাক্টের পক্ষ থেকে এর আগে বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলেও প্রায় দুই একর জমিতে নতুন করে অরণ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই জমিতেও বনাঞ্চলের গাছ কেটে দখলের চেষ্টা করেছিল জমি মাফিয়ারা। অ্যাক্টের সদস্যরা কেবল গাছই লাগাননি, একই সঙ্গে সারা বছর সেগুলির দেখভাল করছেন। অ্যাক্টের কর্তা রাজ বসু বলেন, ‘উত্তবঙ্গের জন্য ভাইচুং সব সময়েই কিছু না কিছু করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। এ বার অরণ্য সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। খুবই ভালো উদ্যোগ। আমাদের পক্ষ থেকে তাঁকে সমস্ত রকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)