• হাইকোর্টে শুনানি বাংলায়, সরকারি কাজে তবু ব্রাত্যই
    এই সময় | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • কৃষকদের জন্যে রাজ্যে চালু হয়েছে কৃষকবন্ধু প্রকল্প। যার সুফল ভোগ করছেন রাজ্যের হতদরিদ্র কৃষকরা। কিন্তু সেই সুবিধা পাওয়ার জন্যে তাঁদের ফর্ম ভরতে হচ্ছে ইংরেজিতে! বার্ধক্য ভাতা, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, ইলেকট্রিকের পারমিশন এবং জমি–বাড়ির মিউটেশনের জন্যেও এখনও ইংরেজিই ভরসা। সরকারি কাজে বাংলা ভাষা চালুর জন্যে দফায় দফায় নবান্ন থেকে নির্দেশিকা জারি হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে রাজ্য সচিবালয় পর্যন্ত, রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে বাংলা।

    প্রতি বছরের মতো শুক্রবারও রাজ্যে ঘটা করে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষার প্রতি বাঙালির আবেগ ধরা পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পৌ। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানাতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে এ দিন দিনভর শুনানি হয়েছে বাংলায়।

    বৃহস্পতিবারই বিচারপতি তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে রেখেছিলেন আইনজীবীদের। আইনজীবীরাও হাসিমুখে তা মেনেছেন। তা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, হাইকোর্টে যদি বাংলায় শুনানি হতে পারে তা হলে সরকারি কাজে কেন বাংলা ব্যবহার হবে না!

    পঞ্চায়েত দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, বার্ধক্য ভাতা, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সামাজিক প্রকল্পের সিংহভাগ গ্রাহকই গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা ইংরেজিতে সড়গড় নন। সে কথা মাথায় রেখে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও ফর্ম ছাপানো হয়েছে। কিন্তু বাংলায় ফর্ম ফিল–আপ করতে গেলে নানা সমস্যা হচ্ছে।

    অনেক সময়ে দেখা যাচ্ছে, আধার কার্ডে থাকা ইংরেজি নামের সঙ্গে ফর্মের বাংলা বানান মিলছে না। এখন সব প্রকল্পেই সরকারি সাহায্যের টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়। তার সঙ্গে আধার লিঙ্ক করা থাকে। নাম বিভ্রাটের কারণে অনেকের টাকা পেতে সমস্যা হয়। সে জন্যেই বাংলা ফর্মও ইংরেজিতে পূরণ করতে হচ্ছে।

    হাওড়ার বাছরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামসুন্দর মেটিয়া বলেন, ‘আমরা নিজেরাও ইংরেজি ভালো জানি না। সে জন্যে আমরা সব কিছু বাংলাতেই লিখি। কিন্তু আধিকারিকরা মূলত ইংরেজিতেই লেখেন। বিডিও, এসডিও কিংবা ডিএম অফিস থেকে যে সব নির্দেশিকা বেরোয় সেগুলি সবই ইংরেজিতে। ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্যে ইংরেজি এবং বাংলা, দু’টি ভাষায় ফর্ম পূরণ করতে হয়।’

    রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী জানান, ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি রাজ্য সরকার প্রথম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বাংলাকে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পঞ্চায়েত থেকে মহাকরণ পর্যন্ত রাজ্য প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশিকাও জারি করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যসচিব মনীশ গুপ্ত। সেটা তিনি লিখেছিলেন বাংলাতেই। তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেলেও প্রশাসনিক কাজে বাংলার ব্যবহার এখনও সীমিত।

    তিনি বলেন, ‘একমাত্র তথ্য–সংস্কৃতি দপ্তরের কিছু অর্ডার বেরোয় বাংলায়। যাদের সঙ্গে গ্রামের সম্পর্ক সব থেকে বেশি, সেই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরেও অর্ডার কিন্তু লেখা হয় ইংরেজিতেই! সে–সব গ্রামের সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারেন না।’

    প্রাক্তন মুখ্যসচিব মনীশ গুপ্ত বলেন, ‘আমি যখন মুখ্যসচিব ছিলাম সেই সময়ে সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে একটা অর্ডার করেছিলাম। সম্ভবত ওটা বাংলায় হাতে লেখা অর্ডার ছিল। এখন আগের থেকে বাংলা ভাষার ব্যবহার বেড়েছে। পঞ্চায়েত স্তরেও অনেক কাজ বাংলায় হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)