• ঘাটালের গ্রামে গজিয়ে উঠছে ইংরাজি মাধ‌্যম স্কুল, পড়ুয়া কমছে প্রাথমিকে
    প্রতিদিন | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রত্যন্ত বঙ্গের প্রাথমিক ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থার ছবিটা। সরকারি অর্থাৎ বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে। আর একের পরে গুজে উঠছে ছোটখাটো কেজি স্কুল। তার কোনওটার অনুমোদন আছে, কোনওটা নেই। কোনওটা চলছে তিন কামরার ঘরে। জেলা শিক্ষা দপ্তরের কাছেও ছবিটা স্পষ্ট নয় পুরোপুরি। কোথায় এরকম কেজি স্কুল আছে কত তার তথ্যও পুরোপুরি নেই জেলা শিক্ষা দপ্তরে অথবা প্রশাসনের কাছে।

    কিন্তু গ্রামের ঢালাই রাস্তা দিয়েও এখন খাঁচায় ভরা কেজি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গাড়ি দেখা যায়। কোনওক্রমে সংসার চালানো পরিবারও তার ছেলে বা মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দিতে ব্যস্ত। বাংলা কি ধীরে ধীরে ব্রাত্য হচ্ছে? দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার প্রাথমিক বিদ‌্যালয়গুলিতে গাণিতিক হারে কমছে পড়ুয়ার সংখ‌্যা। উল্টোদিকে, বেসরকারি বাংলা মাধ‌্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ‌্যমের বিদ‌্যালয়গুলিতে পড়ুয়ার সংখ‌্যা বাড়ছে। সরকার স্বীকৃত বাংলা মাধ‌্যমের প্রাথমিক বিদ‌্যালগুলির বেহাল দশা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষক সংগঠনগুলিও।

    শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, প্রাথমিক বিদ‌্যালয়গুলির বেহাল দশার কারণে যেমন অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ‌্যম বিদ‌্যালয়মুখী করতে চাইছেন না। উল্টে ইংরেজি মাধ‌্যমের বিদ‌্যালয়গুলিতে যাওয়ার ঝোঁক বাড়ছে। ফলে বাংলা ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনীহা বাড়ছে এই প্রজন্মের পড়ুয়াদের। সমস‌্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ‌্যক্ষ শ‌্যামপদ পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষক সংকটে ভুগছে জেলার বহু প্রাথমিক ও মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয়। অনেকে সরকারি বিদ‌্যালয়মুখী হতে চাইছে না। ফলে বেসরকারি বিদ‌্যালয়গুলিতে ভিড় বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই রাজ‌্য সরকার ভাবছে বৈকি।’’

    জেলায় বেসরকারি বিদ‌্যালয়ের সংখ‌্যা দিতে পারেননি শ‌্যামবাবু। তবে তিনি মানছেন জেলার এই ধরনের বিদ‌্যালয়ের সংখ‌্যা বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রথামিক বিদ‌্যালয়ের সংখ‌্যা ৪,৭৯০টি। পঞ্চম শ্রেণি বিশিষ্ট প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ে নূন্যতম ছয়জন শিক্ষক থাকার নিয়ম। কিন্তু ৯০ শতাংশ বিদ‌্যালয়ে এই সংখ‌্যক শিক্ষক নেই। আবার চতুর্থ শ্রেণি বিশিষ্ট বিদ‌্যালয়ে নূন্যতম পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা। প্রায় ৮০ শতাংশ বিদ‌্যালয়ে তা নেই। অনেক বিদ‌্যালয় এক শিক্ষক বিশিষ্ট হয়ে পড়েছে। ৩১ জানুয়ারির পর এই সংখ‌্যাটি দাঁড়িয়েছে ৫০। সর্বশেষ তথ‌্য বলছে, জেলায় পড়ুয়ার সংখ‌্যা তিন লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৮৫ জন। শিক্ষকের সংখ‌্যা ১৪ হাজার ৫৪০ জন।

    অন‌্যদিকে, একইভাবে শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে জেলার শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও মাধ‌্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (আপার প্রাইমারি সমতুল‌্য) এবং নিউ সেট আপ জুনিয়র হাই স্কুলগুলি। একটি তথ‌্য বলছে, এই মুহূর্তে প্রায় ১০০টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ শিক্ষকের অভাবে। মাধ‌্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ৬২টি। আবার ৫০০-র বেশি প্রাথমিক বিদ‌্যালয় প্রধান শিক্ষকহীন। ফলে বাংলা মাধ‌্যম বিদ‌্যালয়গুলি ধুঁকছে শিক্ষকহীনতায়। এবিপিটিএর রাজ‌্য সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘শুক্রবার সারা রাজ‌্য তথা দেশজুড়ে মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। একের পর এক বিদ‌্যালয় সংকটে পড়ছে শুধু শিক্ষকহীনতার কারণে। শিক্ষক না থাকলে পড়ুয়াদের কেন বিদ‌্যালয়ে পাঠাবেন অভিভাবকরা? ফলে তাঁরা গজিয়ে ওঠা বাংলা মাধ‌্যম ও ইংরেজি মাধ‌্যম বিদ‌্যালয়মুখী হচ্ছে। অদূর ভবিষ‌্যতে বাংলা ভাষা সংকটে পড়ার অন‌্যতম কারণ হয়ে উঠবে এই শিক্ষক সংকট। আমরা তা স্পষ্ট দেখতে পারছি। তাই অবিলম্বে বিদ‌্যালয়গুলিতে শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।”

    ঘাটালের ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সদ‌স‌্য সোমেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবশ‌্যই এটা মানতে হবে বিদ‌্যালয়ে শিক্ষক না থাকলে শিক্ষা-সংকট অনিবার্য। তার ফলে বাংলা বা ইংরেজি মাধ‌্যম বিদ‌্যালয়মুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা সংকটের মুখে পড়তে বাধ‌্য।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)