• স্বামীকে বাঁচাতে গিয়েও ব্যর্থ, ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন দম্পতি
    এই সময় | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, হাবরা: তাঁদের দাম্পত্য অশান্তি ছিল রোজকার ঘটনা। সেই অশান্তি চরমে ওঠে শুক্রবার। অশান্তির মাঝেই স্ত্রীকে ‘সবক’ শেখাতে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে বেরিয়ে যান স্বামী। স্ত্রী স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে পিছু নেন। কিন্তু ততক্ষণে স্বামী উঠে গিয়েছেন রেললাইনে। শেষ চেষ্টা করেছিলেন স্ত্রী। পারেননি। শেষে দু’জনের দেহই ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

    শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাবরার জয়গাছি ৩০ নম্বর রেলগেটের কাছে। মৃত দম্পতি তৃনাথ সাহা (৪৫) এবং সুনন্দা সাহা (৩৮) থাকতেন ৩০ নম্বর রেলগেটের কাছেই ঝুপড়িতে। জিআরপি দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না–তদন্তের জন্য বারাসত হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃনাথ–সুনন্দার দুই নাবালক সন্তান রয়েছে। বাড়িতে স্বামী–স্ত্রী–দুই সন্তান ছাড়াও রয়েছেন তৃনাথের বৃদ্ধা মা। চার বছর আগে রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দু’টি পা–ই হারান তৃনাথ। সংসার চালাতে তারপর ছোট্ট একটি গুমটি দোকান চালাতেন তিনি। স্ত্রী সুনন্দা লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন।

    প্রতিদিন আকণ্ঠ মদ খেতেন তৃনাথ। একে অভাবের সংসার, তার উপর স্বামীর নিত্য মদ্যপানে তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন সুনন্দা। এ নিয়ে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত।

    রোজকার মতো শুক্রবার সকালেও একপ্রস্থ অশান্তি হয় দু’জনের। অশান্তির পর দুপুরে লাঠিতে ভর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তৃনাথ। যাওয়ার আগে বলে যান ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেবেন। প্রথমে খুব একটা আমল না দিলেও সুনন্দা স্বামীর পিছু পিছু বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু ঝুপড়ির পাশেই রেললাইন। তৃনাথ লাইনে উঠে পড়েন। তখনই আপ শিয়ালদহ-বনগাঁ লোকাল আসছিল। স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে যান সুনন্দা। কিন্তু দু’জনেই ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন।

    প্রতিবেশী বৃষ্টি ঘোষ বলেন, ‘তৃনাথকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন সুনন্দা। পারলেন না। উল্টে নিজের জীবনটাও দিলেন। দু’জনের এ ভাবে মৃত্যু খুব মর্মান্তিক।’ আর এক পড়শি অনন্ত বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিদিনের অশান্তি ছিল। শেষে এই ভাবে দু’জনে শেষ হয়ে গেল। বাড়িতে দুটো বাচ্চা রয়েছে। কী যে হবে ওদের।’ তৃনাথের মা অঞ্জলি সাহা বলেন, ‘ঝগড়া করত ওরা। তা বলে এ ভাবে চলে যাবে ভাবতে পারছি না।

  • Link to this news (এই সময়)