• প্রান্তিক মহিলাদের স্বপ্ন বুনতে শেখাচ্ছে সোহিনীর ‘সোহাগ’
    এই সময় | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুদীপ দত্ত

    সালটা ২০১২। আর পাঁচটা সাংস্কৃতিক সংস্থার মতো শিলিগুড়িতেও পথচলা শুরু করল ‘টেগোর অ্যাপ্রিসিয়েশন সোসাইটি’। সংক্ষেপে, ‘ট্যাস’। সদস্য শিলিগুড়িরই কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী। প্রথম দিকে, সংস্থাটি শিলিগুড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গীতিনাট্য উপস্থাপন করেছিল কলকাতা এবং মুম্বইয়ে। সম্পাদক সোহিনী গুপ্ত।

    পথ চলতে চলতেই ‘ট্যাস’ সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনেরও তাগিদ অনুভব করে। তার সূচনা হয় ২০১৫ সালে। সে বছর শিলিগুড়ির ১০টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের বছরভর অবৈতনিক ভাবে গান শেখাতে শুরু করে ওই সংস্থা। সেই কর্মসূচিরও প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সোহিনী। ২০১৬ সালে সুকনা-শালবাড়ির একটি রিহ্যাব-এ এক বছর ধরে ‘কনফিডেন্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিল্ডিং প্রোগ্রাম’ করে ওই সংস্থা।

    সোহিনী বলছেন, ‘এ সবই দলগত কাজ।’ ওই বছরের শেষ তিন মাস রিহ্যাব-এ নাটকের কর্মশালাও চলেছিল। কর্মশালা শেষে রিহ্যাব-এর আবাসিকেরা শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে। ২০১৮ সালে ফের নতুন পদক্ষেপ। বলাই বাহুল্য, সে বারেও মুখ্য ভূমিকায় সোহিনী। তাঁর সংস্থা এ বার পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে উদ্যোগী হয়। জন্ম নেয় ‘সোহাগ’ নামে আরও একটি সংস্থা।

    সোহিনী এবং তাঁর দল মহিলাদের প্রশিক্ষিত করে ‘সোহাগ’-এ কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করেন। ‘সোহাগ’ এখন দেশের পরিচিত একটি ব্র্যান্ড, যারা মহিলাদের পোশাক তৈরি করে। এই মুহূর্তে ওই সংস্থায় কুড়ি জন মহিলা কাজ করছেন। ২০২১ সালে শিলিগুড়ির ২০ জন এবং কালিম্পংয়ের প্রান্তিক গ্রাম সিন্দেবংয়ের ২০ জন মহিলাকে সুগন্ধি মোমবাতি তৈরির কাজ শেখাতে শুরু করেন সোহিনীরা। এই মহিলারাও প্রথম বার বাড়ি থেকে বেরিয়ে রোজগারের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

    সোহিনীর কথায়, ‘দেশের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা আমাদের মোমবাতি কেনে। দুবাই, অস্ট্রেলিয়া এবং ক্যানাডাতেও এই মোমবাতির ভালো চাহিদা রয়েছে। আর সেই চাহিদাই প্রান্তিক মহিলাদের স্বপ্ন সফল করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য উত্তরবঙ্গের রাভা সম্প্রদায়। তাঁদের ঐতিহ্যবাহী বয়ন শিল্পকে সংরক্ষণ করা এবং সেটাকে আধুনিকীকরণ করে মানুষের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি আমরা।’

    কিন্তু, একটা সাংস্কৃতিক সংস্থা কী ভাবে এমন অন্য পথে হাঁটতে শুরু করল? সোহিনী বলেন, ‘শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি ভাবনা নয়। সমাজ, সমবায় ভাবনা এবং ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নিয়ে রবীন্দ্র-দর্শনেই আমরা অনুপ্রাণিত। আর সেটাই আমাদের দিশা দেখিয়েছে। বর্তমানে আমাদের মতো দেশে মহিলাদের আত্মনির্ভর হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর সেটাকেই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

    সোহিনীর সংযোজন, ‘আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন রাজসি মজুমদার, অরুণা সরকার, মৈত্রেয়ী সিনহা, সমীর মুখোপাধ্যায়, রোশনী সরকার, সায়ন চক্রবর্তী, কোয়েল রায়, হৈমন্তী চক্রবর্তী, মীরা রায়, মৌকণা মুখোপাধ্যায়, জয়িতা সেন এবং প্রণয় গুপ্তা। তাঁদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।’

    কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের জন্য কি ‘ট্যাস’-এর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হারিয়ে গেল? এ বার মুচকি হাসেন সোহিনী, ‘শিকড়কে কি কখনও ভোলা যায়!’

  • Link to this news (এই সময়)