এই সময়, কৃষ্ণনগর: চাইল্ড লাইন মারফত নয়, ‘বন্ধু’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এক গ্রামবাসীর কাছে খবর এসেছিল পুলিশের কাছে। গ্রামে ১৪ বছরের এক নাবালিকার সঙ্গে ১৭ বছরের এক নাবালকের বিয়ে হচ্ছে জানতে পেরেই তৎপর হয়ে ওঠেন পুলিশকর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে সটান বিয়ের আসরে হাজির হন তাঁরা।
নদিয়ার চাপড়া থানা অবশেষে বাল্যবিবাহ রুখতে সক্ষম হয়েছে। তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। পুলিশ দেখেও বিয়ে থামাতে রাজি ছিলেন না নাবালিকার বাবা–মা। বাধা দেন আত্মীয়রাও। অভিভাবকদের দু’পক্ষই অবুঝ হলে শেষ পর্যন্ত মোট তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর–কনের পিঁড়িতে বসা ওই নাবালক–নাবালিকাকে উদ্ধার করে নিরাপদ হোমে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চাপড়া থানার একটি গ্রামে। নাবালকের দুই আত্মীয় উত্তম ও পবিত্র মণ্ডল এবং নাবালিকার এক আত্মীয় সুমন মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের ডিএসপি শিল্পী পাল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যাঁরা থানায় আসতে পারেন না বা থানা–পুলিশ নিয়ে ভয় পান, তাঁদের অভিযোগ শুনতে বা মানবিক কোনও সাহায্য করতে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ক্যাম্প করে আমরা ‘বন্ধু’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছি।
অসহায় অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পাঠানো, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা, নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা, মদের ঠেক বন্ধ করার মতো খবর পেয়ে যাতে দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়ানো যায়, সেই উদ্যোগ নিয়েছে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই চাপড়ার গ্রামের এই বাল্যবিবাহের খবরটা আমাদের কাছে এসেছিল। পুলিশ দ্রুত ছুটে গিয়ে সেই বিয়ে আটকেছে।’
চাপড়া থানার আইসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যিনি গ্রুপে খবরটা দিয়েছিলেন, তাঁর নাম প্রকাশিত হলে আক্রোশের মুখে পড়তে পারেন। তাই তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।’
ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের আরও এক সদস্য হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকাল সদস্য তৃণমূলের সইফুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘খবরটা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। আমন্ত্রিতদের খাওয়া–দাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান তখনও শুরু হয়নি। সবাই মিলে বোঝানোর চেষ্টা করি। তবে ওঁরা শুনতে চাইছিলেন না।’
আইসি বলেন, ‘আইনি বিষয় দু’পক্ষকে বোঝালেও নাবালিকার অভিভাবকেরা বার বার বলতে থাকেন, এক বার বিয়ে আটকালে মেয়ের আর বিয়ে হবে না। নাবালকের বাবা এবং অন্য আত্মীয়রাও বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের তিন অভিভাবককে গ্রেপ্তার করতে হয়। ছেলে–মেয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’
তৃণমূলের চাপড়ার ব্লক সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম বলেন, ‘ওরা যদি পড়াশোনা করতে চায়, দলের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে।’