এ যেন ঠিক কর্পূরের মতো উবে যাওয়া! অপরাধের প্রমাণ আছে, কিন্তু অভিযুক্তের খোঁজ নেই! লোক লাগিয়ে পাহারা, খোঁজখবর, তল্লাশি— এত কিছুর পরেও অভিযুক্তের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। হরিদেবপুরে ভাড়া নেওয়া বাড়ির ভিতরে মহিলাকে গলা কেটে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে এখনও ধরতে পারেননি তদন্তকারীরা। কার্যত অন্ধকারেই হাতড়াচ্ছেন তাঁরা। মাসখানেক আগের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত যে ভাবে ফেরার হয়ে গিয়েছে, তা মনে করাচ্ছে বছর আড়াই আগে ভবানীপুরে জোড়া খুনে ফেরার মূল অভিযুক্তকে।
গত ২৩ জানুয়ারি হরিদেবপুর থানা এলাকার ডায়মন্ড পার্কে একটি ভাড়া বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ছায়া সর্দার নামে এক মহিলার মৃতদেহ। ঘটনার দিন চারেক আগেই বছর ত্রিশের ওই মহিলা স্বামী পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে এসে সেখানে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই ঘর থেকেই মেলে ছায়ার রক্তাক্ত দেহ। বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে রক্ত চুঁইয়ে বাইরে বেরোচ্ছে দেখে বাড়ির মালিক হরিদেবপুর থানায় খবর দেন। হাত-পা বেঁধে, গলার নলি কেটে মহিলাকে খুন করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছিল লালবাজার। যে ব্যক্তির সঙ্গে মহিলা ওই ভাড়া বাড়িতে এসেছিলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁর খোঁজ মেলেনি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, স্বামী কার্তিক সর্দারের সঙ্গে ওই ভাড়া বাড়িতে এসেছিলেন মহিলা। তদন্তে নেমে খুনের ঘটনার সঙ্গে স্বামীর যোগ পায় পুলিশ। যদিও সপ্তাহ পেরোলেও তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে কোথায় গিয়েছেন, কার আশ্রয়ে রয়েছেন— সে ব্যাপারেও অন্ধকারে তদন্তকারীরা। অভিযুক্তের এ ভাবে উধাও হয়ে যাওয়া তদন্তকারীদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ভবানীপুরের জোড়া খুনের মূল অভিযুক্তের পালানোকে।
২০২২ সালের জুন মাসে ভবানীপুর থানা এলাকার হরিশ মুখার্জি রোডে নিজের তেতলা বাড়িতে খুন হন অশোক শাহ (৬০) এবং তাঁর স্ত্রী রশ্মিতা শাহ (৫৫)। পাশাপাশি দু’টি ঘর থেকে তাঁদের রক্তাক্ত দেহ মেলে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বিশাল বর্মণ, যতীন মেহতা, রত্নাকর নাথ, সন্তোষ কুমার ও সুবোধ সিংহ নামে পাঁচ জনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি কেনার নাম করে ঘরে ঢুকে ওই দম্পতিকে খুন এবং জিনিসপত্র হাতানোর পরিকল্পনা করেছিল দীপেশ শাহ নামে এক আত্মীয়। পরিচিত দীপেশকে দেখে অশোক ঘরে ঢুকতে দেন। খুনের পরে বেশ কিছু জিনিসপত্র লুট করে সদলবল পালিয়ে যায় দীপেশ। বাকিরা ধরা পড়লেও এত দিনেও গ্রেফতার করা যায়নি দীপেশকে। সে নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করে না। কোনও আত্মীয়-পরিচিতের সঙ্গে যোগাযোগও করে না। তাই পুলিশের ধারণা, দীপেশ ভোল বদলে, নাম-পরিচয় পাল্টে কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
হরিদেবপুরের ঘটনায় মহিলার স্বামী কার্তিকই যে জড়িত, সে ব্যাপারে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত। এই সংক্রান্ত একাধিক তথ্য-প্রমাণও মিলেছে বলে লালবাজার জানিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন ধরা যাচ্ছে না কার্তিককে? পুলিশ জানাচ্ছে, কার্তিক এমনিতেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। পরিবারের বাকিদের সঙ্গেও বিশেষ যোগাযোগ ছিল না। কার্যত ভবঘুরের মতো জীবন কাটাতেন। তাই তাঁর নাগাল পেতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘যে কোনও অভিযুক্তকে ধরতে প্রযুক্তি সব সময়ে খুব সাহায্য করে। কিন্তু এই অভিযুক্ত প্রযুক্তি-নির্ভর কোনও কিছু ব্যবহার না করায় নাগাল পেতে অসুবিধা হচ্ছে। বিভিন্ন উপায়ে ধরার চেষ্টা চললেও এখনও সাফল্য আসেনি।’’