• প্রণয় দে-কে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেল পুলিশ, প্রতীপ এখনও বেসরকারি হাসপাতালে
    আনন্দবাজার | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সমস্ত নথিপত্র তৈরি ছিল। প্রণয় দে এবং তাঁর কিশোর পুত্র প্রতীপ দে-কে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আনন্দপুর এবং ট্যাংরা থানাকে অনুরোধও করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের তরফে জানানো হয়, ওই দু’জনের চিকিৎসার বিল শনিবার সকাল পর্যন্ত পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। রোগীর আত্মীয়স্বজন সেই বিল মেটাতে রাজি নন। এই ‘অতি বিশেষ’ অবস্থায় আর্থিক ছাড়পত্র ছাড়াই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার অনুমোদন দিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশকে তাঁরা অনুরোধ করেন, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া মিটিয়ে ওই দু’জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে শুধু প্রণয়কেই ছাড়া হয়েছে। এর পর প্রণয়কে নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ। প্রতীপের জন্য অন্য হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করা যায়নি বলেও হাসপাতাল সূত্রে খবর। অন্য দিকে, প্রণয়ের ভাই প্রসূনকে এখনই বাইপাসের ধারের ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হচ্ছে না।

    গত বুধবার রাত ৩টে নাগাদ অভিষিক্তা মোড়ে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দেওয়ার পরে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রণয়, তাঁর পুত্র প্রতীপ এবং ভাই প্রসূন দে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রতীপের চিকিৎসার খরচ হয়েছে ৩ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। ওই একই সময় পর্যন্ত প্রণয়ের চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। শনিবার পর্যন্ত তাঁদের চিকিৎসার জন্য কোনও টাকাই জমা দেওয়া হয়নি হাসপাতালে। হাসপাতালের তরফে আরও জানানো হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় এই বিষয়ে দে ভাইয়েদের আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। এর পরেই ট্যাংরা এবং আনন্দপুর থানার পুলিশকে প্রণয় এবং প্রতীপকে দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয় হাসপাতালের তরফে। বিল না-মেটানো হলেও ‘অতি বিশেষ’ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আর্থিক অনুমোদন ছাড়াই দুই রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। নথিপত্রও প্রস্তুত রাখা হয়। এর পর রাতে শুধুমাত্র প্রণয়কে ছাড়া হয়।

    দে ভাইয়েরা দাবি করেছিলেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণেই পরিবারের সকলে মিলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। ঋণ যে তাঁরা করেছিলেন, তা-ও জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা বার বার দাবি করেছেন, আর্থিক সঙ্কটের বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেননি। অন্তত পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রা দেখেও তা বোঝা যায়নি। মৃতা সুদেষ্ণা দে এবং রোমি দে-র বাপের বাড়ির লোকজনও একই দাবি করেছেন। তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, দে পরিবারের চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছিল। বাজারে কয়েক কোটি টাকা দেনাও হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও খরচে লাগাম টানতে পারেনি তারা। সেই কারণে হতে পারে এই ‘বিপর্যয়’। খরচের এই বাহুল্যের কথা জানিয়েছেন তাঁদের আত্মীয়েরাও। এ বার তাঁরা অস্বীকার করেছেন দে পরিবারের তিন সদস্যের হাসপাতালের বিল মেটাতে। তার পরেই পুলিশকে তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)