• মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু স্বামী স্ত্রী ও মেয়ের 
    বর্তমান | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • রাজদীপ গোস্বামী, নলপা: জঙ্গলের একপাশে রয়েছে ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রাম থেকেই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। গোটা গ্রামে থমথমে পরিবেশ। সকাল থেকে গ্রামে কারও বাড়িতে উনুন পর্যন্ত জ্বলেনি। কারণ মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় গ্রামের একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবিটা  গড়বেতা থানার নলপা গ্রামের। এই ঘটনায় পরিবারের আরও এক সদস্য মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, গোটা গ্রামের মানুষ শোকস্তব্ধ। এদিন সকালেই দুর্ঘটনার খবর আসে। মৃতদের পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।  নলপা গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবেশী সন্ধ্যা মণ্ডলের চোখে জল। তিনি বলছিলেন, পরিবারটা কুম্ভ স্নানের জন্য গেল। আর ফিরে আসবে নিথর দেহ। বাড়িতে রান্না-খাওয়া বন্ধ। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। ওদের বাড়িতে যাওয়ার মতো মানসিক জোর পাচ্ছি না।  এই ঘটনা ঘটবে তা ভাবতে পারছি না। 


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নলপা গ্রামের বাসিন্দা প্রণব সাহা(৪২) সুযোগ পেলেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে যেতেন। প্রণববাবু  মেকানিকের কাজ করতেন। তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তাঁরা চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রণববাবু।  তাঁর ছেলে সুদীপ সাহা স্থানীয় পানিকোটর হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। জানা গিয়েছে, ছেলে সুদীপের পরীক্ষা শেষে তাঁরা অমৃত স্নানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। প্রণববাবুর সঙ্গে ছিলেন ছেলে সুদীপ, মেয়ে অন্বেষা সাহা(৪) ও স্ত্রী শ্যামলী সাহা (৩৩)। তাঁরা সপরিবারে শুক্রবার দুপুরে বাইকে চেপে আরামবাগের গোঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর সেখানে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে একটি গাড়িতে চেপে মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। 


    ধানবাদের কাছে তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনায় প্রণববাবু ছাড়াও মেয়ে ও স্ত্রী মৃত্যু হয়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী প্রণববাবুর ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এদিন সকালে বাড়িতে মৃত্যুর খবর আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। জানতে পেরে বাড়ির সামনে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। স্থানীয় গড়ঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সঞ্জয় মণ্ডল পরিবারের লোকজনদের সান্ত্বনা দেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা ব্যাখ্যা করার কোনও ভাষা নেই। অনেকেই যাচ্ছেন বলে হয়তো তাঁরাও মহাকুম্ভে যাচ্ছিলেন।  


    পরিবারের সদস্য রঘু সাহা বলেন, মৃতদেহ আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসেছিলেন। শুনেছি প্রথমে একটা গাড়িতে ধাক্কা মারে। পরে আরেকটি গাড়ি তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা দেয়। পরিবারের তিনজন সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা লাগছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)