• বিএড-ডিএলএড প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্নাতক কোর্স চালু করতেই হবে, কেন্দ্রের ফরমানে বন্ধের মুখে রাজ্যের ১২০০ কলেজ
    বর্তমান | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: ডিএলএড বা বিএড কলেজের অস্তিত্ব অদূর ভবিষ্যতেই মুছে যাচ্ছে! অর্থাৎ পৃথকভাবে এগুলির কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। সৌজন্যে মাল্টিডিসিপ্লিনারি বা বহুক্ষেত্রীয় বিষয় পড়ানো নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিতে সাধারণ ডিগ্রি কলেজের মতো বিএ, বিএসসি বা বিকমের মতো কোর্স করাতে হবে। না হলে নয়া পদ্ধতির শিক্ষক শিক্ষণ কোর্স (আইটিইপি) চালুর অনুমতি মিলবে না। আর, এর ফলেই রাজ্যের প্রায় ১২০০ সরকারি এবং বেসরকারি বিএড-ডিএলএড কলেজ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা।


    শিক্ষক-শিক্ষণের কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই একটি খসড়া নীতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই নয়া পদ্ধতির কোর্সগুলি চালু করা হচ্ছে। তবে, এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানই এমন কোর্স চালানোর জন্য উপযুক্ত। কারণ সেখানে অন্যান্য বিষয় এবং শাখার ডিগ্রি কোর্স চলে। এনসিটিই যে যোগ্যতাবিধি বেঁধে দিয়েছে, তাতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই উত্তীর্ণ হতে পারবে না। বিল্ট আপ এরিয়া ছাড়াও বিপুল পরিমাণে জমি (ছাত্রসংখ্যা এবং কোর্সের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তন সাপেক্ষ), অন্যান্য পরিকাঠামো, বহু সংখ্যক শিক্ষক থাকার কথা বলা হয়েছে। এগুলি সরকারি বা বেসরকারি কোনও কলেজেই নেই। ফলে, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।


    এখন থেকে ইন্টিগ্রেটেড টিচার এডুকেশন প্রোগ্রাম (আইটিইপি) বর্তমানের ডিএলএড কোর্সের বিকল্প হয়ে উঠবে। দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে চার বছরের এই কোর্স করলে তা ডিএলএড এবং বিএডের সমতুল্য বলে গণ্য হবে। উল্টে বিএডে এক বছর বাঁচবে। আর্টস, সায়েন্স, ফিজিক্যাল এডুকেশন, যোগা প্রভৃতি বিভিন্ন শাখায় আইটিইপি করা যাবে। এর পাশাপাশি, এক বছরের বিএড চালু হচ্ছে। ফলে, পুরনো পদ্ধতির বিএড-এমএড কোর্সগুলি আপাতত চালু থাকলেও তা নিয়ে আগ্রহ থাকবে না। ২০৩০ সালের পরে ডিএলএড বলে কোনও কোর্স থাকবেও না। কলেজগুলিকে ২০২৮’এর মধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে এনসিটিই।


    শিক্ষক মহলের একটা অংশ বলছে, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির মাল্টিডিসিপ্লিনারি নীতিটিই গোলমেলে। অন্তত পরিকাঠামো উন্নয়ন না করে ভারতের মতো দেশে এটা কার্যকর করতে গিয়ে ক্ষতিই হচ্ছে। আর একক বিএড বা ডিএলএড কলেজে ডিগ্রি কোর্স চালু হলে প্রথাগত ডিগ্রি কলেজগুলি কী করবে? তবে, সেই প্রশ্ন আসছে আরও পরে। একজন শিক্ষক বলেন, ‘রাজ্যের সরকারি কলেজগুলিতে এনসিটিই-র আগের গাইডলাইনের চেয়ে ১০-১৫ জন করে কম শিক্ষক রয়েছেন। ফাঁকা জমি বলতেও কিছু নেই। ফলে বেসরকারি কলেজগুলির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এরা তো নতুন কোর্স চালানোর অনুমতিই পাবে না।’ এদিকে, অনুমোদন সাপেক্ষে এনসিটিই সাধারণ ডিগ্রি কলেজে এডুকেশন বিভাগ থাকলে সেখানেও বিএড বা নয়া কোর্সগুলি চালানোর অনুমতি দিতে চাইছে। ফলে, সব ধরনের কলেজই প্রতিযোগিতায় নেমে যাবে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আইআইটিতেও শিক্ষক-শিক্ষণ কোর্স চালু রয়েছে বা হতে চলেছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অন্য প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা কঠিন। এই জটিল পরিস্থিতি একটা বড় অংশকে কর্মহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)