রূপক মজুমদার, বর্ধমান
২০২৪–এর জুলাইয়ে ছত্রাকে ভর্তি ল্যাংচা উদ্ধারে মুখ পুড়েছিল শক্তিগড়ের মিষ্টি বিক্রেতাদের। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হলে তৎপর হয়েছিল ব্যবসায়ী সংগঠন। ল্যাংচার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে গুণমান বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন তাঁরা। তার পরেও রাতারাতি ফেরেনি বিশ্বাস। এ বারের কুম্ভমেলা ফিরিয়ে আনল সেই বিশ্বাস। রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রয়াগে যাওয়া পূণ্যার্থীরা শক্তিগড়ের ল্যাংচাপাড়ায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিনছেন দেদার মিষ্টি। তাতে লাভের মুখ ভালোই দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
শক্তিগড়ের আমড়ার দু’ধারে ল্যাংচার দোকানগুলোয় এখন প্রতিদিন ভিড়। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা ছাড়া হাওড়া, হুগলি থেকে গড়ে দেড় থেকে দুশো গাড়ি দাঁড়াচ্ছে জাতীয় সড়কের দু’দিকে। দীর্ঘ দিনের ল্যাংচা ব্যবসায়ী প্রদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘আমার রাস্তার দু’ধারেই দোকান রয়েছে। কুম্ভে যাওয়ার সময়ে ল্যাংচা খেয়ে অনেকে ফেরার সময়ে বেশি করে নেওয়ার কথা জানিয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যবসা একটু ভালোই হচ্ছে। শুধু কুম্ভ যাত্রীদের কাছে গড়ে সবরকমের সাইজ মিলিয়ে দৈনিক আট থেকে নশো ল্যাংচা বিক্রি হচ্ছে।’
এলাকার প্রতিষ্ঠিত একটি ল্যাংচার দোকান মালিক জামেদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সবারই বিক্রি বেড়েছে। গত এক মাস ধরে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মিষ্টি বেশি তৈরি হচ্ছে। একটাও পড়ে থাকছে না।’
জাতীয় সড়ক বাড়িয়ে ৬ লেনের করা হচ্ছে। তার জন্য প্রায় চার মাস সমস্যায় পড়েছিলেন শক্তিগড়ের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। ব্যবসাতেও মন্দা এসেছিল। যানজটের সঙ্গে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গার অভাব দেখা গিয়েছিল। মিষ্টি ব্যবসায়ী অতনু ঘোষের কথায়, ‘চার মাস আমরা দোকানের খরচ তুলতেই হিমশিম খেয়েছি। বিক্রি তেমন হয়নি। কলকাতা বা আসানসোল থেকে যাতায়াতকারী গাড়িগুলো জায়গার অভাবে দাঁড়াতই না। এখন জাতীয় সড়কের ধারে সার্ভিস লেন হয়েছে। ফলে দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করানো যাচ্ছে। অনেকে এখানে এসে একটু ফ্রেশ হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসার পরিবেশ আবার ফিরছে।’
গত বছরের জুলাইয়ে ল্যাংচায় ছত্রাক কাণ্ডের পরে উদ্বেগে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এখন ব্যবসায়ীদের মূল লক্ষ্য, হারানো গুডউইল ফিরিয়ে আনা। এ বারের কুম্ভমেলা সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। মিষ্টি বিক্রেতা বিদ্যুৎ সাহার বক্তব্য, ‘দু’এক জনের জন্য সবার নাম খারাপ হতে পারে না। আমরা বসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। এখন সবাই টাটকা মাল রাখছেন। ফলে বিক্রি বেড়েছে।’
প্রয়াগরাজ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ফেরার পথে সুমন দে জানাচ্ছেন, ২৫ সিটের বাসে কুম্ভে গিয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের ৬ জন। শক্তিগড়ে বাস দাঁড় করিয়ে ১৬ জায়গায় ১০টি করে ল্যাংচা কিনলেন তিনি। এত মিষ্টি কী হবে জানাতে চাইলে সুমন বলেন, ‘তীর্থ করে ফেরার পরে সবাইকে মিষ্টিমুখ করাতে হয়। তাই সবার জন্য মিষ্টি কিনলাম।’ হাওড়া থেকে কুম্ভে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী প্রবীণ কুমার। ফেরার পথে তিনি বলছেন, ‘ধর্মস্থান থেকে ফেরার পরে মিষ্টি বিতরণে পূণ্য হয়। তাই ২০ টাকা দামের ল্যাংচা নিলাম দুশো পিস। সবাইকে কুম্ভের জল আর মিষ্টি দেবো।’