সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর
বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব, কিংবা ফর্মুলা বুঝতে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসের বিকল্প নেই। খড়্গপুর আইআইটি–র প্রাক্তনী বিমল পাটোয়ারি নিজের শিক্ষাজীবনে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। পরে যখন তিনি সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন, তখন ঠিক করলেন সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) প্রকল্পে তিনি তৈরি করবেন বিশ্বমানের একটি ল্যাবরেটরি। যাতে নিখরচায় হাতেকলমে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ পাবে ছাত্রছাত্রীরা।
সেই ভাবনা থেকে গড়ে উঠল বিজ্ঞানশিক্ষা কেন্দ্র অঙ্কুরণ। দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার রাসবিহারী বসু সরণির কয়েক বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা বিশ্বমানের এই শিক্ষাকেন্দ্রে বিজ্ঞান চর্চা করছে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। বিশাল এই ল্যাবে রয়েছে ম্যাথস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি ও কম্পিউটার প্র্যাক্টিক্যালের ব্যবস্থা। রয়েছেন আইআইটি প্রাক্তনীর মতো দক্ষ শিক্ষকও। দু’বছর ধরে এই ল্যাবে হাতেকলমে পড়াশোনা করে বিজ্ঞান ভীতি দূর হয়েছে বহু পড়ুয়ার।
শুরুর সময়ে দুর্গাপুরের বহু সরকারি, বেসরকারি স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন অঙ্কুরণ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের শিক্ষাকেন্দ্রে এসে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ নিতে আহ্বান জানান। তাতে সাড়া দিয়েছে সরকারি স্কুলগুলো। বিনামূল্যে ওই সব স্কুলগুলোর পড়ুয়ারা সন্ধ্যায় অঙ্কুরণে এসে বিজ্ঞানের তালিম নিচ্ছে।
বিধাননগর গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কুন্তলা পাল বলেন, ‘প্রথমে বাচ্চাদের নিয়ে গিয়ে ল্যাব ঘুরিয়ে দেখানো হয়। পরে ওঁরা পড়ানো শুরু করেন। আমাদের স্কুল থেকে নবম শ্রেণির বাচ্চারা পড়তে যায়। এ বার দশম শ্রেণির বাচ্চারাও পড়তে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের প্রতি ভীতি কেটে গিয়েছে ওদের। আমরা যেটা স্কুলে পড়াই, অঙ্কুরণে গিয়ে ওরা সেটা হাতেকলমে শিখছে।’ অঙ্কুরণের ল্যাবে পড়তে আসা দশম শ্রেণির ছাত্রী দোয়েল ভাণ্ডারী বলে, ‘নবম শ্রেণিতেও পড়েছি এখানে। থিওরির সঙ্গে প্র্যাক্টিক্যাল করানো হচ্ছে। ফলে শিখতে অসুবিধা হয় না। খুব সহজেই অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মতো বিষয়গুলো বুঝতে পারছি।’ এখানে পড়তে আসা পড়ুয়াদের সিংহভাগই বাংলা মাধ্যমের, তাই বুঝতে সুবিধার জন্য পড়ানো হয় বাংলাতেই।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা বিমলের সংস্থা পিনাক্যাল ইনফোটেক দেশে বিদেশে নির্মাণশিল্প ও স্থাপত্য প্রযুক্তি রপ্তানি করে সুনাম কুড়িয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘বাচ্চারা যাতে বিজ্ঞানকে ভালো ভাবে শিখতে পারে তার জন্য এই শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। এখানে পড়াশোনা করলে খুব সহজে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। পড়ার জন্য কোনও পয়সা লাগে না।’ এই কাজে বিমল সঙ্গে পেয়েছেন তাঁর সহপাঠী খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী প্রশান্ত কুমারকে। ফিজিক্সের শিক্ষক প্রশান্ত কুমারের ব্যাখ্যা, ‘টু স্ট্রোক বা ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু সেটা কী ভাবে কাজ করে অনেকেই জানে না। এখানে ল্যাবে সেটা যন্ত্রের মাধ্যমে শেখানো হয়।’ যোগ করেছেন, ‘বায়ো ল্যাবে মানবদেহ সস্পর্কে হাতেকলমে শেখানো হয়, কোন অঙ্গের কী কাজ জানা থাকলে পরীক্ষার খাতায় লিখতে অসুবিধা হয় না বাচ্চাদের। আমরা চাই, আরও বাচ্চা এখানে এসে বিজ্ঞান শিক্ষায় অংশ নিক।’