• বছরে গ্লেসিয়ার গলছে ২৭৩০০ কোটি টন
    এই সময় | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • গোটা বিশ্বের গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ যে ধীরে ধীরে গলছে, তা গত শতাব্দী থেকেই মানুষ জানতে পেরেছে। এর জন্য কী কী হতে পারে, তা-ও জানা অনেকটা। কিন্তু এই যে ধীরে ধীরে ভাবা হতো, তা যে আর ধীরে নয় মোটেই!

    বরং গত ১০ বছরে হিমবাহ গলে যাওয়ার হার এতটাই বেশি যে, তা চোখ কপালে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হিমবাহগুলি প্রতি বছরে গড়ে বরফ হারাচ্ছে ২৭,৩০০ কোটি টন!

    ওজনটা ঠিক কত বড়, তার একটা তুলনা করা যাক। মিশরের যে গ্রেট পিরামিড অফ খুফু, তার ওজন বলা হয় ৬০ লক্ষ টন। আর একটু ভারী কোনও উদাহরণ চাই? চিনের প্রাচীরের যে বিরাট ব্যাপ্তি, তার ওজনের একটা পরিমাপ বিজ্ঞানীরা করেছেন। বলা হয়, গোটা চিনের প্রাচীরের ওজন নাকি মোটামুটি ৫ কোটি ৮০ লক্ষ টন। অতএব, বোঝাই যাচ্ছে, তার চেয়ে ঢের-ঢের বেশি ওজনের বরফ প্রতি বছর গলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের সমুদ্রতলও ক্রমশ উঁচু হচ্ছে। ফলে বিশ্বের নিচু জায়গাগুলির জন্য শুরু হয়ে যাচ্ছে চরম অস্তিত্ব সঙ্কট।

    গত বুধবার ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র, যাকে বলা হচ্ছে গলে যাওয়া বরফের ওজনের মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষণার মধ্যে ধরা হয়েছে ২০০০ থেকে ২০২৩— এই ২৩ বছরের ডেটা। বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা হিমবাহগুলিকে ভাগ করা হয়েছিল মোট ১৯টি অঞ্চলে। ৩৫টি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করেছেন মোট ৫৮ জন বিজ্ঞানী। আর এই ৫৮ জনের মধ্যে মাত্র একজন বাঙালি— বেহালাবাসী অতনু ভট্টাচার্য। শহরের জেআইএস ইউনিভার্সিটির ‘আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং ডিপার্টমেন্ট’–এর বিজ্ঞানী।

    নেচারে পেপার প্রকাশিত হওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি তিনি। বলছিলেন, ‘গবেষণাটির ফান্ডিং করেছিল ইএসএ, মানে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। মোট ৫৮ জনের এই রিসার্চ টিমের নাম ছিল গ্ল্যাম্বি। কয়েক বছর আগে যখন আমার কাছে এই কাজের প্রস্তাব আসে, না করতে পারিনি। দুই থেকে আড়াই বছর লেগে গিয়েছে এই গবেষণায়।’

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরে আইআইটি রুরকি থেকে আর্থকোয়েক বা ভূমিকম্প বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন অতনু। জার্মানির ড্রেসডেনের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক করার পাশাপাশি পড়াতেনও। এরপরে জ়ুরিখ ইউনিভার্সিটি ও স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রিউজ় ইউনিভার্সিটি হয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। সেই সময় থেকেই তিনি আছেন জেআইএস ইউনিভার্সিটিতে।

    আর্থকোয়েক থেকে গ্লেসিয়ার— এটা সম্ভব হলো কী করে? অতনুর জবাব, ‘আর্থকোয়েক নিয়ে গবেষণার সময়ে আমার স্পেশালিটি ছিল ভাইব্রেশন নিয়ে। পরবর্তীকালে হিমালয়, পামির বা হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাহাড়গুলিতে গ্লেসিয়ার সংক্রান্ত গবেষণা করেছি। সেই সূত্রেই হিমবাহ নিয়ে এই গ্লোবাল রিসার্চের জন্য ডাক।’

    এই পেপারে প্রকাশিত গবেষণার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা মূলত গ্লেসিয়েরোলজিক্যাল মেথড, জিওডেটিং এবং বিভিন্ন ক্লাইমেট কন্ডিশনে ফিজ়িক্যাল মডেল তৈরি করে এই গবেষণা করেছি। এই বড় মাপের গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সব রকমের ডেটাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা।’

    অনেক সময়েই টিভিতে নানা প্রোগ্রামে দেখানো হয়, গ্রিনল্যান্ড বা আন্টার্কটিকায় হিমবাহ থেকে বিশাল-বিশাল চাঙড় খসে পড়ছে। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রিনল্যান্ড বা আন্টার্কটিকার আইস শিটের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি ক্ষয় হয়েছে বাকি দুনিয়ার গ্লেসিয়ারের। যেমন, আলাস্কায় ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। অতনুর মতে, এই তথ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিমবাহ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য। যা ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে সাহায্য করবে।

  • Link to this news (এই সময়)