• বিপন্ন সময়েও সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখেন মণীন্দ্র
    এই সময় | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, ডানকুনি

    বয়স ৯৬। অশক্ত শরীর, কিন্তু মনের জোর হার মানিয়েছে শারীরিক দুর্বলতাকেও। জাঙ্গিপাড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মণীন্দ্র জানা এখনও দেখেন দিন বদলের স্বপ্ন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পার্টির সার্বিক অবক্ষয়ের ছবি তাঁকে যন্ত্রণাবিদ্ধ করে তোলে। বলে ওঠেন, ‘দায়িত্ববোধের বড় অভাব, যেটা ভাবাই যায় না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষের হয়ে যারা প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের কী এই অহমিকা শোভা পায়!’

    শনিবার থেকে ডানকুনিতে শুরু হলো সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া সংগঠনকে কতটা মেরামত করে সিপিএম নেতৃত্ব সেই লড়াইয়ের ময়দানে ফিরে আসতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্নের চেয়ে সংশয়–ই বেশি। তবে হাল ছাড়ছেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক। যিনি এ দিন পার্টি সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চের এক ধারে বসেছিলেন উদাসী দৃষ্টি নিয়ে। পরনে সাদা পায়জামা–পাঞ্জাবি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো। গলায় রয়েছে বিশেষ প্রতিনিধির ব্যাজ।

    কেমন লাগছে? প্রশ্ন শুনে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়কের চোখে ঝিলিক দিয়ে ওঠে ফেলে আসা সেই আগুনে দিনের স্মৃতি। বলছিলেন, ‘আমরা যে সময়ে, যে ভাবে পার্টি করতাম, তা কল্পনাই করা যায় না। সেই দায়বদ্ধতাই নেই।’ একটু থেমে ফের বলেন, ‘দায়িত্ববোধের বড় অভাব। তেভাগা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। আমাদের নেতা ছিলেন বিজয় মোদক, বিনোদ দাসের মতো ব্যক্তিত্ব। অন্য একটা আদর্শকাজ করত। পার্টি দরদী তো সকলেই হতে পারে, সংগঠন তৈরি করতে চাই সক্রিয় কর্মী। আমরা তো সেই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েই কাজ করতাম।’

    মধ্য নব্বইয়ের বৃদ্ধের ঝাঁপিতে রয়েছে কত না গল্প! বলে চলেন, ‘জাঙ্গিপাড়ায় আমাদের বাড়িই ছিল পার্টির প্রধান কার্যালয়। সেখান থেকেই সমস্ত কাজ হতো। তার পরে সিপিএমের প্রতীকে বিধায়ক হলাম। কোনওদিন পার্টির সিদ্ধান্ত অমান্য করার কথা ভাবিনি। এখন ঠিক উল্টো ছবিই দেখি।’ যোগ করেন, ‘একটা সময়ে শিক্ষকতাও করেছি, কিন্তু পার্টির কাজের সঙ্গে বাকি কাজগুলো কখনও গুলিয়ে যায়নি।’

    ভোটের অঙ্কে শূন্য হয়ে গেলেও নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও তো উঠে আসছে। তা হলে কেন এত হতাশা? হেসে ফেলেন জাঙ্গিপাড়ার একদা ছ’বারের বিধায়ক। বলেন, ‘আমি এখনও কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি, তাই হতাশা স্পর্শ করে না। শুধু এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কিছু কাজ দেখে খারাপ লাগে।’ যোগ করেন, ‘রাজনীতিতে উত্থান–পতন থাকবেই। আসল বিষয় হল, বামপন্থী আদর্শে দীক্ষা নিলে শুধু কাজ করে যেতে হবে। ফল নিয়ে ভাবব কেন? আমরা তো শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেই সময় পার্টির সর্বক্ষণের কর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হতো। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল নিবিড় যোগাযোগ। সেখানেই ভাটা পড়ে গিয়েছে। তবে আশাহত নই। বিশ্বাস করি, লাল সূর্যোদয় হবেই।’

    ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কেমন লাগছে? স্মিত হেসে জবাব, ‘কিছু ভাল জিনিস তো রয়েইছে। এই ধরুন না, আমি তো অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং প্রাক্তন বিধায়ক। রাজ্য সরকার কিন্তু নিয়মিত ঠিক সময়ে পেনশন দেয়। সেটা অস্বীকার করি কী করে! তবে দুর্নীতির ছায়াটাও বড় দীর্ঘ হয়ে পড়েছে। মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রীও সেটা বুঝতে পারছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)