• ধারে ডুবে পরিবার, পাওনাদারের তাগাদা! মুক্তি পেতে ৭ দিন ধরে আত্মহত্যার পরিকল্পনা দে পরিবারের
    প্রতিদিন | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: বিরলতম আত্মহত্যার ব্লুপ্রিন্ট। প্রায় সাতদিন ধরে সুচতুরভাবে যা কষা হয়েছিল। ট্যাংরার দে পরিবারের খুন-রহস্য তদন্তে নেমে এমনই মনে করছে পুলিশ। কেমন পরিকল্পনা? কীভাবে তা বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল?

    বিষ পায়েসে কিশোরী কন্যার মৃত্যু হলেও প্রাণে বেঁচে যান পরিবারের বাকি পাঁচ সদস্য। সেইজন্য দুই বধূর শিরা কাটা। গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ছেলে প্রতীপকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। হাসপাতালে দুই ভাই প্রসূন ও প্রণয় জেরার সময় আলাদাভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন যে, একবার তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের আর বাঁচার ইচ্ছা নেই। মৃত্যুই চান তাঁরা। দুই ভাইয়ের এই বয়ানেই সন্দেহ হয় পুলিশের।

    কেন এই বিরলতম আত্মহত্যার ছক সাজানো হল, সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে গিয়ে ট্যাংরা থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা যৌথভাবে জেনেছেন যে, দে পরিবারের উপর বিপুল ঋণের চাপ। তার উপর ব্যবসায় বিপুল ক্ষতি। অথচ কারখানা ও বাড়িতে শুরু হয়েছিল পাওনাদারদের আনাগোনা। তাই সামাজিক অসম্মানের ভয় পেতে শুরু করেছিল পরিবার। অথচ ঋণের বোঝায় পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তাদের। ব্যাংক ব্যালান্স পৌঁছয় তলানিতে। সব মিলিয়ে দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে পৌঁছয় দে পরিবার। কার্যত সম্পত্তির ৯০ শতাংশই বন্ধকে দেওয়া হয়। দুই ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করেও দেনা মেটানো সম্ভব ছিল না। নিজস্ব বলতে ছিল কলকাতায় তিনটি গাড়ি।

    সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে প্রণয় ও প্রসূন প্রথমে দু’জন মিলে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করলেও ভাবেন যে, তাঁদের মৃত্যুর পরও দুই স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের উপর পাওনাদারদের ‘অত্যাচার’ বাড়বে। তাই দুই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই কষা হয় এই আত্মহত্যার পরিকল্পনা। প্রথমে প্রণয়ের ছেলে প্রতীপ ও প্রসূনের মেয়ে প্রিয়ংবদাকেও এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। তাদের বলা হয় হরিদেবপুরে ছোট ছেলের স্ত্রী রোমির শ্বশুরবাড়িতে দাদু-দিদার কাছে চলে যেতে। কিন্তু দুই কিশোর-কিশোরী তাদের মা-বাবাদের ছেড়ে কোথাও যেতে চায়নি। গত রবিবার রাতে পুরো পরিবার মিলে ‘লাস্ট সেলিব্রেশন’ করে। খাওয়াদাওয়া হয়। সোমবার আত্মহত্যার জন্য তৈরি করা হয় পায়েস। কিন্তু বাইরে গিয়ে বিষ কিনে আনার মতো সাহস কুলোয়নি প্রণয়দের। তাই ঘরে সুগার, রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ঘুমের পিল-সহ যত রকমের ওষুধ আছে, সব জড়ো করে গুঁড়ো করা হয়। ওষুধের উগ্র গন্ধ কাটাতে তুলসিপাতা মেশানো হয় পায়েসে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)