এই সময়, মেদিনীপুর: প্রয়াগরাজে বেড়াতে গিয়েছে নাতনি। সেখান থেকে ফিরেই ঠাকুমার কোলে উঠে পড়বে, এই আশাতেই রয়েছেন বৃদ্ধা। কিন্তু সেই আশা যে মিটবে না তা এখনও জানেন না বৃদ্ধা। দুর্ঘটনায় যে প্রাণ হারিয়েছে তাঁর আদরের নাতনি।
ধানবাদে দুর্ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন প্রণব সাহা, তাঁর স্ত্রী শ্যামলী, শ্যালিকা পিয়ালি সাহা ও গাড়িচালক রাজন। পরে হাসপাতালে মারা যায় তাঁদের দুই শিশু অন্বেষা ও আগমনী (৬)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি প্রণব–শ্যামলীর বছর তেরোর ছেলে সুদীপ, পিয়ালির স্বামী বিশ্বরূপ ও আরও দুই যাত্রী।
পরিবারের এমন দুঃসহনীয় সংবাদে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধা সুমিত্রা সাহার অন্য তিন ছেলে। মা জানতে চাইলে তাঁরা কাজে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে পড়েন। মাকে কিছুই জানাননি তাঁরা। জানা গিয়েছে, ময়না–তদন্তের পরে দেহ বাড়িতে নিয়ে এসে জানানো হবে সুমিত্রাদেবীকে।
শনিবার সকালে এমন খবর এসে পৌঁছতেই হতবাক হয়ে পড়ে গড়বেতার নলপা গ্রাম। এ দিন ভোরে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরির পিছনে ধাক্কা মারে প্রণব, বিশ্বরূপদের গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রণব, তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকা ও চালকের। বাকিদের ধানবাদের রাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুপুরে মারা যায় অন্বেষা আর আগমনী।
গড়বেতার নলপা গ্রামে প্রণব সাহারা চার ভাই। বড়দা প্রহ্লাদ সাহার পেশা চাষাবাদ। মেজ ভাই প্রবীরের গড়বেতার ময়রাকাটাতে গ্যারাজের ব্যবসা। চন্দ্রকোণা রোডে সেজদা প্রশান্তর সঙ্গে প্রণব যৌথ ভাবে গ্যারাজ চালাতেন। প্রণবই বাড়ির ছোট ছেলে। হুগলির গোঘাটের বাসিন্দা প্রণবের শ্যালিকা পিয়ালি, ভায়রাভাইয়ের সঙ্গে কুম্ভে যাচ্ছিলেন তাঁরা। বাড়িতে প্রণব বলে গিয়েছিলেন, সবাই যখন যাচ্ছে একবার ঘুরেই আসি।
একসঙ্গে ছয় জনের মৃত্যুসংবাদ মেনে নিতে পারছে না নলপা। বিভিন্ন জায়গায় জটলা আর আলোচনা। প্রতিবেশীদের কথায়, প্রণবের ঈশ্বরভক্তি কখনও খুব বেশি ছিল না। পুণ্যস্নানের কথাও তাঁর মুখে কখনও শোনা যায়নি। সবাই যাচ্ছে দেখে তিনিও গিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত পাড়িয়াল বলেন, ‘কাজ পাগল ছিলেন প্রণব। নিজের শ্যালিকার পরিবার যাচ্ছে কুম্ভে, তাঁরাই জোর করেছিলেন দেখে প্রণব যেতে রাজি হয়েছিলেন।’
গড়বেতা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘খবরটা শুনেই এলাকায় গিয়েছিলাম। বাড়িতে যাওয়ার আগে সবাই বললেন, কিছু বলার দরকার নেই। ছেলে, বৌমা, নাতনির মৃত্যুসংবাদ মাকে এখনও জানানো হয়নি। শুনলে বৃদ্ধা কী করবেন, তাই বুঝতে পারছি না। প্রশাসনিক এবং দলগত ভাবে আমরা সবরকম সাহায্য করার কথা জানিয়েছি।’
মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুজয় হাজরাকেও বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে বলে সেবাব্রত জানান। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সবরকম ব্যবস্থা করছেন জানিয়ে বিধায়ক বলেন, ‘শিশুগুলো পর্যন্ত মারা গেল! গড়বেতা এবং হুগলির দুটো পরিবার একেবারে শেষ! শনিবার রাত পর্যন্ত ময়না–তদন্তের কাজ শেষ হয়নি। জেলা প্রশাসন ও আমাদের দলের তরফে সবরকম সহযোগিতা করা হয়েছে।’