কুম্ভে যাওয়ার পথে শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ ধানবাদের রাজগঞ্জ থানা এলাকায় জাতীয় সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার নলপা গ্রামের প্রণব সাহা (৪২), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা (৩৪) এবং বছর পাঁচের শিশুকন্যা অন্বেষার। ধানবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে ছেলে সুদীপ (১৩)।
শুধু প্রণবের গোটা পরিবার নয়, দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত তাঁর শ্যালিকা (পিয়ালী সাহা)-র পরিবারও। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে ছিলেন পিয়ালী, তাঁর স্বামী স্বরূপ এবং তাঁদের দুই সন্তানও। মৃত্যু হয়েছে পিয়ালী (৩০) ও তাঁর শিশুকন্যা আগমনী (৬)-র। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন পিয়ালীর স্বামী স্বরূপ সাহা (৪৫)।
ধানবাদের একটি সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর রবিবার রাতে প্রণব, শ্যামলী ও ছোট্ট অন্বেষার দেহ ফিরেছে নলপা গ্রামে। রবিবার দুপুরে সেই কথার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম। শোকে মূহ্যমান প্রণবের গোটা পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনেরা।
শুধু পরিবার নয়, গ্রামের সকলেরই প্রিয় ছিলেন বছর ৪০-র প্রণব। গ্রামের সব উৎসব-অনুষ্ঠানে এগিয়ে আসতেন প্রণব। বন্ধু অর্ণব, সুরজিৎ, বিষ্ণু-রা বলেন, ‘অনেক করে বলেছিলাম যাওয়ার দরকার নেই। ও বলল, এরকম সুযোগ তো বারবার আসবে না। সবাই মিলে যাচ্ছি। ঠিকঠাক চলে আসব। বন্ধু আর ফিরল না।’
বন্ধু অর্ণব মণ্ডলের কথায়, ‘বছর দশেক আগে রাস্তা চওড়া হওয়ার সময় চন্দ্রকোণা রোডে ওর গ্যারাজটা ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর পেট্রোল পাম্পে গাড়ি সারাইয়ের কাজ করত ও। সেই সকাল ছ’টায় বেরিয়ে, সন্ধ্যাবেলা ফিরত। আর ফিরেই আমাদের আড্ডা। নিজেদের সংসারের সুখ-দুঃখের কথা আলোচনা হতো। ওকে ছাড়া কী ভাবে থাকবো, ভাবতেই পারছি না।’
ছোট শ্যালক প্রণবের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বাড়ির বড় জামাই সুকুমার সাহা বলেন, ‘শ্বশুরমশাই মারা যাওয়ার পর থেকে, ওই তো সবকিছু করত। সকাল থেকে সন্ধ্যা সারাদিন পরিশ্রম করত ও। এই ঘটনার পর আমাদের তো আর শ্বশুরবাড়ি আসতেই ইচ্ছে করবে না।’
চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট প্রণব। দোতলা বাড়িতে দুই দাদাকে নিয়ে থাকতেন। বছর দশেক আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মা সুমিত্রা দেবী (৭০) ভয়াবহ দুর্ঘটনায় খবর পেয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। ছোট ছেলেকে আদর করে ডাকতেন গোপাল। সংজ্ঞা ফিরলে একটাই কথা, ‘গোপাল, তুই আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলি।’ ছোট্ট অন্বেষাকে ঠাকুমা ডাকতেন ‘বোনু’। ছবি এঁকে ঠাকুমার কাছে নিয়ে আসত সে। সেই সব মুহূর্তগুলো এক পলকে স্মৃতি হয়ে গেল! এই শোক সামলে ওঠা কি সহজ, বলছেন প্রতিবেশীরা।