শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: অসুস্থ এক বধূর মৃত্যু হয়েছিল দু’মাস আগে। ঝাড়ফুঁকের কারণে ওই মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। আর তার জেরে ডাইনি অপবাদে এক পরিবারের উপর হামলা চালালেন একদল গ্রামবাসী। ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে জখম সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী-সহ ওই পরিবারের আরও এক সদস্য। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি। শনিবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের অনন্তপুর পঞ্চায়েতের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের ঘটনা।
খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে যায়। উত্তেজিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রায়গঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। জখমদের উদ্ধারের পর প্রথমে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তারপর রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আক্রান্ত পরিবারের বাকি সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এলাকায় শান্তি ফেরাতে রবিবার সকালে বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিরন্ময় সরকার এবং জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এলাকায় যান। গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকও হয়। এদিন বিকেলে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিনিধিরা এবং বিজ্ঞানমঞ্চের কর্মীরা গ্রামে পৌঁছন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন হয়। এলাকা থমথমে থাকায় গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটল? গত দু’মাস আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তাপসী বর্মন নামে এক বছর ত্রিশের বধূর মৃত্যু হয়। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে লক্ষ্মীপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জ্বর,সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। এই অবস্থায় শনিবার বিকেলে রায়গঞ্জের এক ওঝার সঙ্গে দেখা করেন কালিয়াগঞ্জে মৃত বধূর পরিবার। সেখানে এক ওঝা নাকি জানান, বধূর মৃত্যু পাশের বাড়ির বাসিন্দার দোষে হয়েছে! তার জন্যই অসুস্থ হচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
ব্যাস, ডাইনি অপবাদ, কুসংস্কারের গুজব আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে অনন্তপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। তারপরই রাতে ওই বাড়িতে হামলা চলে। কয়েকশো মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে হামলা চালান বলে অভিযোগ। তাঁদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। অস্ত্রের কোপ মারা হয় স্বামী-স্ত্রী-সহ আরও একজনকে। এদিকে জানা গিয়েছে, ওই দুই পরিবারের বিবাদ দীর্ঘদিনের। সেই বিবাদ থেকেই কি এই হামলা?
জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল নেতা নিতাই বৈশ্য বলেন, “মন্ত্রের জন্য কোনও মানুষের মৃত্যু হয় না। মৃত্যুর বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ আছে। মেডিক্যাল টিম এবং বিজ্ঞানমঞ্চের কর্মীরা সচেতনতা শিবির গড়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”