সদ্য নবান্নে আই-প্যাক কর্তা প্রতীক জৈনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এর কিছুদিন আগেই আই-প্যাকের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে শেষমেশ রণেভঙ্গ দেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা মদন মিত্র। এই প্রেক্ষাপটে অনলাইন নিউজ পোর্টাল 'দ্য ওয়াল'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আই-প্যাকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়!
আর, শুধু মুখ খুললেন বললেই বোধ হয় পুরোটা বলা হয় না - বস্তুত, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে কল্যাণের প্রায় ৬ মিনিটের যে সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে, তা তীব্র আক্রমণাত্মক। পেশাদার আইনজীবী, সংসদে প্রবল 'ভোকাল' এই মানুষটি যে আই-প্যাককে নিয়ে একটুও সন্তুষ্ট নন, বরং বেজায় ক্ষুব্ধ, সেটা কোনওরকম রাখঢাক না করেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। প্রশান্ত কিশোর থেকে শুরু করে প্রতীক জৈন - কল্যাণ কাউকেই আক্রমণ করতে ছাড়েননি।
এই সাক্ষাৎকারে কল্যাণ আই-প্যাককে কোনও ভোটকুশলী সংস্থা বলে পাত্তাই দেননি! বরং, তাঁর মতে আই-প্যাক হল একটি 'ঠিকাদার' সংস্থা। কল্যাণের সাফ কথা, একটা রাজনৈতিক দল কীভাবে কাজ করবে, সেটা সেই দলের নেতৃত্ব ঠিক করবে। কাজ হবে নেতৃত্বের বিশ্লেষণ অনুসারে। কোনও নেতা বা কর্মীর রাজনৈতিক যোগ্যতা রয়েছে কিনা, সেটা কোনও 'কন্ট্রাক্টর' সংস্থা স্থির করে দেবে না!
শুধু তাই নয়। কল্যাণ মনে করেন, এই ধরনের ঠিকাদার সংস্থার যখনই রাজনীতিতে ঢোকে, তখনই সেখানে দুর্নীতির অবকাশ তৈরি হয়। কল্যাণের আরও অভিযোগ, আই-প্যাক 'অসৎ', তারা 'টাকা তোলে' এবং সারারাত 'পার্টি করে'! কল্যাণের অভিযোগ, আই-প্যাক যে অসৎ আচরণ করেছে, তার প্রভাব তৃণমূল কংগ্রেসের উপর পড়েছে!
এমনকী, ভোটকুশলী হিসাবে প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-কেও কোনও গুরুত্ব দিতে রাজি নন কল্যাণ। তাঁর মতে, প্রশান্ত কিশোর মোটেও 'সংগঠন করেন না'। প্রশ্ন হল, তাহলে মমতা কেন সম্প্রতি নবান্নে প্রতীক জৈনকে ডেকে কথা বললেন?
এর সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন কল্যাণ। তাঁর দাবি, 'দিদি' কার সঙ্গে কখন কী বৈঠক করছেন, তা তাঁর জানা নেই। তবে, একইসঙ্গে কল্যাণের চ্যালেঞ্জ, আই-প্যাকের যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে তারা পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই বা কংগ্রেসের মতো দলকে জিতিয়ে দেখাক! কিংবা কেন্দ্রে ফের একবার বিজেপিকে হটিয়ে কংগ্রেসকে জিতিয়ে দেখাক! তাহলে তিনি এই সংস্থার যোগ্যতা, দক্ষতা বা কৃতিত্ব মেনে নেবেন।
তবে, এসবের মাঝেই লক্ষ্যণীয় বিষয় হল - নেতা হিসাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'ফুল মার্কস' দিয়েছেন বয়সে এবং অভিজ্ঞতায় সিনিয়র কল্যাণ। তিনি মনে করেন, বড় নেতা হওয়ার মতো সমস্ত যোগ্যতাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের রয়েছে। তবে, তিনি কার পরামর্শ মেনে চলবেন, সেটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু, কল্যাণের জোর যুক্তি - অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর আই-প্যাক মোটেও সমার্থক নয়।
আই-প্যাক শুধুই উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলির সঙ্গে সঙ্গত করে তাদের ভোট বৈতরণী পার করিয়ে দেওয়ার দাবি করে বলেও মনে করেন কল্য়াণ। এবার দেখার, আগামী দিনে কল্যাণ তাঁর এই অবস্থানে টিকে থাকেন, নাকি মদন মিত্রের মতো তাঁকেও অবস্থান বদল করতে হয়!