• রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পুরনো গৌরব ফেরাতে চান নয়া উপাচার্য
    বর্তমান | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: একসময় দেশে কৃষিবিজ্ঞান পঠন পাঠনেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু একের পর এক সমস্যার সেই সুনাম আজ বেশ ধূসর। এবার ঘুরে দাঁড়াতে ছয় দফা সমস্যা চিহ্নিত করেছেবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নবনিযুক্ত উপাচার্য অশোককুমার পাত্র চাইছেন, যেভাবেই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। একাধিক বৈঠক করে সমস্যা সমাধানে জোর দিয়েছেন তিনি। 


    নদীয়া সীমান্তের মোহনপুরে কয়েক একর জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাফল্যের উচ্চ শিখরে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছরে অবনমন হয়েছে। ৫১তম প্রতিষ্ঠা বর্ষে এসে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। গতবছর ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন একে পাত্র। তিনি এখন মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তিনি ছয় দফা সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। তারমধ্যে প্রথম এবং প্রধান সমস্যা অর্থাভাব। বিগত কয়েক বছরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে উপযুক্ত সমন্বয়ের অভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। একশ্রেণি কর্মীর দাবি, প্রাক্তন কিছু পদস্থ কর্তা ক্ষমতাসীন দলের বিরোধী মানসিকতা পোষণ করেছিলেন। ফলে সরকারের কাছে নায্য প্রাপ্যের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেননি। প্রয়োজনীয় অর্থ আনার ন্যূনতম চেষ্টাও করেননি বলে অভিযোগ। সেই কারণে পরিকাঠামগত উন্নয়ন হোক বা ক্যাম্পাস, অথবা জীর্ণ হস্টেল সংস্কারের কাজ দিনের পর দিন হয়নি।


    তালিকায় দ্বিতীয় সমস্যা, প্রচুর শূন্যপদ। দিনের পর দিন ধরে নিয়োগ না হওয়ার কারণে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে সাধারণ অফিস কর্মী বর্তমানে হাতে গোনা। এক্ষেত্রে দু’হাজারের কাছাকাছি স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা বিভাগের পড়ুয়া থাকলেও ফ্যাকাল্টি ২৫০ জনের আশেপাশে। শূন্যপদ প্রায় ১২০টিরও বেশি। একইভাবে শিক্ষাকর্মী ও অফিস কর্মী মিলিয়ে শূন্যপদের সংখ্যা দুই শতাধিক। তৃতীয় সমস্যা, খাতায় কলমে প্লেসমেন্ট সেল থাকলেও তা নিষ্ক্রিয়। ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়তে আসা পড়ুয়ারা ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপর। চতুর্থ সমস্যা, অর্থাভাবের কারণে পরিকাঠামগত উন্নয়ন ও গবেষণার কাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে। 


    কৃষিবিজ্ঞান পঠন-পাঠনের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২৫টি বিভাগ থাকলেও বহু জায়গাতেই পরিকাঠামো মান্ধাতার আমলের। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ সমস্যা, রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব। সেক্ষেত্রে একাংশ কর্মীদের সদ্দিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে আঙুল উঠেছে। এছাড়াও, ছাত্র রাজনীতির কারণেও ব্যাকফুটে যেতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। 


    উপাচার্য অশোককুমার পাত্র বলেন, ‘ডিসেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে সমন্বয়ের অভাব তৈরি হয়েছিল, তা মেটানোর চেষ্টা করছি। দপ্তর থেকে অর্থ বরাদ্দ করে আনার চেষ্টা চলছে বিসিকেভি’র মান উন্নয়নে। প্রতিটি বিভাগে স্মার্ট ক্লাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও পড়ুয়াদের উপযুক্ত ট্রেনিং, প্লেসমেন্ট দেওয়া যায় কীভাবে, তা নিয়েও চেষ্টা করছি। এতবছর ধরে যে গ্রাফ নীচে নেমেছে, তার একাধিক কারণ চিহ্নিত করে আলাদা আলাদা করে মেটানোর চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতির বদল ঘটবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)