আচমকা নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত খানাকুলের কয়েকশো বিঘা জমি
বর্তমান | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, খানাকুল (বলাইচক): গতবারের বন্যার সময়ই ডিভিসির ছাড়া জলে ভেঙেছিল বাঁধ। তার মেরামতির কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। ভাঙা বাঁধের সেই অংশই ফের ডিভিসির জলে ভেঙে প্লাবিত করেছে কৃষিজমি। কিছু ঘরবাড়িতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। তাতেই তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। চাষিদের দাবি, বন্যার পর কয়েকমাস কেটে গেলেও অজ্ঞাত কারণে বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ হয়নি। কোনওভাবে বালির বস্তা দিয়ে পাশে একটি চলাচলের জন্য রাস্তা করে দেওয়া হয়। মূল বাঁধ মেরামতি না করে শাখাগুলির কাজ করা হয়। তাই রবিবার বাঁধ মেরামতি নিয়ে খানাকুলে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
শনিবার মাঝরাত থেকে খানাকুল-২ ব্লকের চিংড়া পঞ্চায়েতের বলাইচক এলাকায় বাঁধ ভাঙে। তারপরই জল ঢুকতে শুরু করে কৃষিজমিতে। জলমগ্ন হয়ে যায় কয়েকশো বিঘা জমির আলু। ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। বাঁধ ভাঙার জেরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
এদিন অবশ্য ঘটনার পর প্রশাসনের আধিকারিকরা এলাকা পরিদর্শন করে বৈঠক করেন। সেচ দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারও আসেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুর থেকে ডিভিসি ১০৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়ে। এদিন দুপুর পর্যন্ত তা চলে। বাঁধ ভাঙার পর অবশ্য নতুন করে আর জল ছাড়া হয়নি বলে দাবি। কিন্তু বলাইচকের পাশাপাশি অন্যান্য এলাকাতেও বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাই অনেকেই আতঙ্কে আলু তোলার কাজও শুরু করে দিয়েছেন।
এলাকার চাষি রামপদ সাউ, উৎপল রায়রা বলেন, আমরা সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছিলাম। আলু বিক্রি করে সেই ঋণ শোধ করা হয়। সবাই জানে এই সময় বোরো চাষের জল দেওয়া হয়। তার আগে প্রশাসন বাঁধ মেরামতি করতে না পারলে মাইকিং করে জানাতে পারত, তাহলে আমরা চাষ নিয়ে সতর্ক হতে পারতাম। এখন ঋণ শোধ করে কী খাব? তাই প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিলে চাষিদের সুরাহা হবে। আরেক বাসিন্দা শ্যাম ভৌমিক, সল্টু মজুমদার বলেন, সদিচ্ছা থাকলে খুব কম সময়ের মধ্যেই বাঁধ মেরামতি করে দেওয়া যেত। কিন্তু শনিবার বৃষ্টি হতে কিছুক্ষণ কাজ হয়। তারপর বন্ধ হয়ে যায়।
বিজেপি পরিচালিত খানাকুল ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রুম্পা মন্ডল বলেন, খুবই ধীর গতিতে ঠিকাদার সংস্থা বাঁধের কাজ করেছে। আমরা তা নিয়ে অনেকবার বলেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি হওয়ায় এমন আচরণ বলেই মনে হয়।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের মদনমোহন কোলে বলেন, বিজেপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। সেচ দপ্তরের হাওড়া ডিভিশনের তরফে এই বাঁধটির কাজ করা হচ্ছিল। কিন্তু আচমকা বর্ধমানে বৃষ্টি হওয়ায় জলের উচ্চতা প্রায় তিন ফুট বেড়ে যায়। তাতেই বিপত্তি বাধে। নতুন করে আর কোথাও বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। লক গেটগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।