অভিষেক পাল, বহরমপুর: বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদে নিয়মিত ঢুকছে শত শত গোরু। পুরনো পদ্ধতিতেই সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে গবাদি পশু। তারপর কিছুদিন গ্রামে সেগুলি রেখে সুযোগ বুঝে ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লুকিয়ে চুরিয়ে হলেও সেই পুরনো পদ্ধতিতেই চলছে গোরু পাচার। বাংলাদেশে অবৈধভাবে গোরু পাচারের অভিযোগে মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক কেষ্টবিষ্টু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের নজরে আসে। কেউ কেউ জেল খেটে বাইরে বেরিয়েছে। তবে গোরু পাচার কাণ্ডে ধরপাকড় শুরু হতেই কিছুদিন গবাদি পশু পাচারের ব্যবসায় লাগাম পড়েছিল। কিন্তু শনিবার বহরমপুর থানার পুলিস ৭০টি গোরু ও বাছুর উদ্ধারের পর ফের পাচারের তত্ত্ব সামনে আসছে। গোরু নিয়ে আসার সময় ধরা পড়তেই পাচারকারীরা দাবি করেছে, তারা বছর খানিক ধরে এভাবেই গোরু আনছে। বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে ছোট ছোট গাড়িতে করে গোরু আসে। গোরু বোঝাই করা গাড়িগুলি মুর্শিদাবাদ জেলায় ঢুকে প্রথমে বড়ঞা থানা এলাকা পার করে। তারপর খড়গ্রাম থানার সামান্য অংশ পার করে সোজা ঢুকে পড়ে কান্দি থানা এলাকায়। আগেও যেমন প্রতিটি থানায় পুলিসকে ম্যানেজ করে চলত পাচার, এখনও পদ্ধতি সেই একই। থানার ডাক মাস্টাররা টাকা নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তা দিয়েই গোরুর গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। শনিবার পুলিসের জালে দশ গোরু ব্যবসায়ী ধরা পড়তেই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে তারা।
তাদের দাবি, বিহার থেকে বীরভূমের সাঁইথিয়ার পশুর হাট হয়ে মুর্শিদাবাদ নিয়ে আসা হয় গোরুগুলিকে। রাস্তায় সাত-আটটি মোড়ে পুলিসের হাতে টাকা দিলেই রাস্তা ক্লিয়ার। এভাবেই শনিবার গোরুগুলিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বেলডাঙায়। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় এগুলি বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল। বীরভূম থেকে কান্দি হয়ে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায় গোরু। বিশেষ করে প্রতি শনি ও রবিবার বীরভূম থেকে গোরু ঢুকছে বলেই জানা গিয়েছে। ছোট ছোট মালবাহী গাড়িতে ঠেসে গোরু ভরে নিয়ে আসা হচ্ছে। কান্দি থানা এলাকায় ঢুকে রাস্তায় কয়েকটা জায়গায় টাকা দিলেই সব ম্যানেজ হয়ে যায় বলে দাবি করেছে পাচারকারীরা।
তবে কান্দি থানার এক পদস্থ পুলিস আধিকারিক বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলেছে। কোথাও কেউ কোনও টাকা তোলে না। গোরুও নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। তবে স্থানীয় পশুর হাট থেকে গোরু অনেকেই কিনে নিয়ে যায় বাড়িতে পোষার জন্য। সেসব গাড়ি তো আটকানো যায় না। তবে, শনিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বহরমপুর থানার অন্তর্গত সাটুই চৌরিগাছা এলাকায় হানা দেয় পুলিস। তিনটি গোরুভর্তি গাড়ি উদ্ধার করা হয়। গাড়িগুলি থেকে মোট ৭০টি গোরু ও বাছুর উদ্ধার হয়েছে বলেই জানিয়েছে পুলিস। এই ঘটনায় মোট দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের সকলের বাড়ি বেলডাঙায়। উদ্ধার হওয়া গোরুগুলিকে বাজারপাড়া এলাকায় একটি খোঁয়াড়ে রাখা হয়েছে। কান্দি মহকুমা হয়েই বীরভূম থেকে এই জেলায় ঢোকে গোরুর গাড়িগুলি।
জেলার এক পুলিস আধিকারিক অবশ্য বলেন, ওইদিন মোট ৩০টি গাড়ি ছিল। রেইড করার খবর পৌঁছে যেতেই অন্য গাড়িগুলি পালিয়ে যায়। তিনটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে ৭০টির বেশি গোরু উদ্ধার হয়েছে। প্রতিটি থানার অফিসারদের সতর্ক করা হচ্ছে, যাতে কেউ এই ধরনের অবৈধ কাজে মদত না দেয়। গ্রেপ্তার হওয়া দশজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই গোরু পাচারের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে।