• মুদির দোকানের আড়ালে জাল ডিসিআরের কারবার
    বর্তমান | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মুদির দোকানের আড়ালে জাল ‘ডিসিআর’-এর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট) এর কারবার। বিএলএলআরও-র সিল ও সই জাল করে অর্ধেক দামে বিক্রি করা হচ্ছিল সেগুলি। কোটি কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অভিনব কায়দায় চলছিল পাথরের অবৈধ কারবার। যদিও শেষ রক্ষা হল না। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার সকালে ওই দোকানগুলিতে অভিযান চালিয়ে চার দোকানদার সহ এক ছাপাখানার মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। সোমবার ধৃতদের বিরুদ্ধে বিএনএস আইনের ৩৩৮, ৩৩৬(৩), ৩৪০(২), ৩৪১(১)(২), ৩৩৯, ৩(৫) এবং মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস অ্যাক্টের ২১ ধারা যুক্ত করে রামপুরহাট আদালতে তোলা হয়। বিচারক ধৃতদের চারদিনের পুলিস হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। 


    ২০১৭ সালে বীরভূম জেলার ২১৭টি খাদানের মধ্যে ২১১টিকে পরিবেশ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। খাতায় কলমে সেগুলি বন্ধ থাকলেও আসলে সবই চলছে। একইভাবে পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র নেই এমন কয়েক হাজার ক্র্যাশারও অবৈধভাবে চলছে। তবে এখন কারবারের ধরনটা পাল্টে গিয়েছে। আগে খাদান থেকে পাথর তোলার ক্ষেত্রে টন প্রতি রয়্যালটির টাকা আগেই জমা করতে হতো মাইনস্ ডিপার্টমেন্টে। অধিকাংশ খাদান অবৈধ ঘোষণা হওয়ায় বৈধ রয়্যালটি নিতে পারছে না। এখন চিপসের উপর ‘ডিসিআর’ কাটলেই অবৈধ পাথর বৈধ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রামপুরহাটে পাথর শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় বসানো হয়েছে রয়্যালটি আদায়ের গেট। যদিও বেশ কিছুদিন থেকেই জাল ডিসিআরের মাধ্যমে পাথরের অবৈধ কারবার চলছিল। যার জেরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব মার যাচ্ছিল সরকারের। কিছুদিন আগে বীরভূমের বালি পাচার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরই বালি, পাথর পাচার রুখতে অভিযান শুরু করেছে পুলিস প্রশাসন। 


    এদিন গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রামপুরহাটের পাথর শিল্পাঞ্চল যাওয়ার রাস্তার ঝনঝনিয়া মোড়ে দু’টি টিমে ভাগ হয়ে চারটি মুদিখানার দোকানে হানা দেয় পুলিসের দল। সেখান থেকে বেশ কিছু জাল ডিসিআর উদ্ধার করেছে পুলিস। তারা জানিয়েছে, পাথর বোঝাই লরির চালকরা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে সেই জাল ডিসিআর সংগ্রহ করত। ডিসিআরে থাকা বিএলএলআরওর সই সিল জাল। এরপরই দোকান মালিক মিরাজ আলি ওরফে সাদ্দাম কার্তিক সাহা, হাফিজুল শেখ, মোশারফ হোসেন ওরফে রাজ শেখকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বাড়ি রামপুরহাটের কালিকাপুর ও বনহাট গ্রামে। থানায় নিয়ে এসে জেরা করে পুলিস জানতে পারে রামপুরহাটের ভাঁড়শালা মোড়ে একটি ছাপাখানায় সেগুলি ছাপানো হয়েছে। সেই মতো ছাপাখানার মালিক মাসুদ আলমকে গ্রেপ্তার করে। বা঩জেয়াপ্ত করা হয় ছাপার মেশিন। পুলিস জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন থেকে জাল ডিসিআর কারবারের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ধৃতদের জেরা করে এই চক্রের বাকি সদস্যদের নাম পাওয়ার চেষ্টা করা হবে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের নলহাটি থানার নাকপুর চেকপোস্টের কাছে জাল ডিসিআর সহ পাথর বোঝাই একটি লরি আটক করে পুলিস। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। শুধু তাই নয়, রাজস্ব ফাঁকি দিতে শিল্পাঞ্চল থেকে ট্রাক্টরে করে পাথর এনে রাস্তার ধারে গোলার আকারে মজুত করা হচ্ছিল। পরে সেখান থেকে ডাম্পার, লরিতে বোঝাই করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাচার চলছিল। সম্প্রতি নলহাটি ও মুরারইয়ের চাতরায় এমন বেশ কিছু গোলায় অভিযান চালিয়ে পাথর বাজেয়াপ্ত করে পুলিস প্রশাসন। সব মিলিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাথর পাচারের রমরমা কারবার শুরু হয়েছে বীরভূমজুড়ে।
  • Link to this news (বর্তমান)