সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: ‘ভূতুড়ে’ ভোটার নিয়ে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যে তারা দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উত্তরবঙ্গে বুথভিত্তিক সচিত্র ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখছে। এদিকে ‘ভূতুড়ে’ ভোটারের অস্তিত্ব কার্যত মেনে নিয়েছে বিজেপিও। তারা ওরকম ভোটারের খোঁজে অভিযানে নেমেছে। ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে এই ইস্যুতে গা ঘামাচ্ছে জোড়াফুল ও পদ্ম শিবির। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতির ময়দানে পারদ ক্রমশ চড়ছে।
উত্তরবঙ্গে বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৪টি। গত লোকসভা ভোটের তুলনায় অধিকাংশ কেন্দ্রেই বেড়েছে ভোটার সংখ্যা। বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২০টিতেই বেড়েছে ভোটার। এমন প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলায় জেলায় ভূতুড়ে ভোটারের খোঁজে অভিযানে নেমেছে তৃণমূল। প্রশাসন সূত্রে খবর, কোচবিহারের ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সাতটিই বাংলাদেশ সীমান্তাবর্তী। সংশ্লিষ্ট সাতটি কেন্দ্রেই খসড়া ভোটার তালিকার তুলনায় চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় ১৬ হাজার ৩১১ জন ভোটার বেড়েছে। যারমধ্যে তুফানগঞ্জ কেন্দ্রে ভোটার বেড়েছে সর্বাধিক, ৪৪৫৫ জন। এছাড়া নাটাবাড়িতে ৩৬৬০, মেখলিগঞ্জে ১৭১৬, মাথাভাঙায় ২৪৬০, শীতলকুচিতে ২৫২২, সিতাইয়ে ২৬৭ ও দিনহাটায় ১২৩১ জন ভোটার বেড়েছে। এরমধ্যে তুফানগঞ্জ, নাটাবাড়ি, মাথাভাঙা ও শীতলকুচি বিজেপির কব্জায়। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এবার তোর্সাপারে পদ্মের ভিত অনেকটাই দুর্বল। কাজেই কেন্দ্রগুলিতে ভোটার বৃদ্ধির নেপথ্যে পদ্মের ছক রয়েছে বলেই তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, প্রতিটি বুথ কমিটির কাছে ভোটার তালিকা পাঠানো হয়েছে। ভূতুড়ে ভোটার চিহ্নিত করতে দলের অঞ্চল সভাপতির নেতৃত্বে তালিকা ধরে বুথে অভিযান শুরু হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অভিযান শেষ করে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হবে। বিজেপির উত্তরবঙ্গের কনভেনার তথা ফলাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন বলেন, কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রে ভূতুড়ে ভোটার রয়েছে। এজন্য বিজেপি নয়, তৃণমূলই দায়ী। এ ব্যাপারে আমরাও বুথ ভিত্তিক অভিযান শুরু করেছি। শীঘ্রই ভুয়ো ভোটারদের নামকাটার দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানাব। উল্লেখ্য, গঙ্গা ও মহানন্দা নদী বেষ্টিত উত্তরবঙ্গের আরএকটি সীমান্তবর্তী জেলা মালদহতেও বেড়েছে ভোটার সংখ্যা। প্রশাসন সূত্রের খবর, খসড়া ভোটার তালিকায় জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ছিল ৩১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯১৬ জন। চূড়ান্ত তালিকায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লক্ষ ৭৫ হাজার ২৫২ জন। এরমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হবিবপুরে ২৪৬৫, গাজলে ২০৫৭, মালদহে ১৩৩৮ এবং ইংলিশবাজারে ১৪২৮ জন ভোটার বেড়েছে। একইভাবে জলপাইগুড়িতে ৫৩৯, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে ১৩৬১, রাজগঞ্জে ৮৬৪, বালুরঘাটে ৭৫১, তপনে ৮৯৯, গঙ্গারামপুরে ১৫১৯, কুমারগঞ্জে ৯০১, হেমতাবাদে ১৪৬৯, কালিয়াগঞ্জে ১১৩৬ এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে ২৭১ জন ভোটার বেড়েছে।