• ট্যাংরা কাণ্ড: জ্যোতিষচর্চা পারদর্শী ছিলেন প্রণয়, দে পরিবারের সকলের মেডিক্লেমের কাগজ কেন রাখা ছিল টেবিলে?
    এই সময় | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: লিভিং রুমের কাছে একটি টেবিল। তার উপর বাড়ির ছ’জনের প্রত্যেকের মেডিক্লেমের নথি গুছিয়ে রাখা। ট্যাংরার অটল সুর রোডের দে বাড়ির সব সদস্যের মেডিক্লেমের ওই নথি নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা।

    পুলিশকে যেটা ভাবাচ্ছে, তা হলো, বাড়ির সবাই যদি আত্মহত্যা করবেন বলেই সিদ্ধান্ত নেন, সে ক্ষেত্রে মেডিক্লেমের নথি কেন বার করে টেবিলে রাখা হয়েছিল? মারা গেলে তো মেডিক্লেমের টাকা পাওয়া যায় না। ট্যাংরা থানার পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার অফিসারদের এই জায়গাতেই খটকা লাগছে। তাঁদের একাংশের প্রশ্ন, প্রণয় ও তাঁর ছোট ভাই প্রসূন দে যা যা বলেছেন, তার সব সত্যি তো?

    বাড়ির দুই বৌকে এবং ছোট ভাইয়ের মেয়েকে খুন করার পর সত্যিই কি তাঁরা বড় ভাইয়ের নাবালক ছেলেকে নিয়ে আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যেই দুর্ঘটনা ঘটান? তদন্তকারীরা প্রণয় ও প্রসূনের মোবাইল ফোনের কল ডিটেল রেকর্ড বা সিডিআর খতিয়ে দেখছেন। শেষ কার সঙ্গে মোবাইল ফোনে দুই ভাইয়ের কথা হয়েছিল এবং কী কথা হয়েছিল, সেটা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। প্রণয় ও প্রসূন ব্লাড প্রেশার ঘুমের কড়া ডোজ়ের ওষুধ সত্যিই ১৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার রাতে খেয়েছিলেন কি না, সেই ব্যাপারেও গোয়েন্দারা সংশয়ে। এই নিয়ে ইএম বাইপাস লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

    দে পরিবারের আত্মীয়দের সূত্রে নতুন একটি তথ্য তদন্তকারীরা জেনেছেন। সেই তথ্যের সঙ্গে গোটা ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।পুলিশ সূত্রের খবর, বড় ভাই প্রণয় দে জ্যোতিষচর্চা করতেন। শুধু তা–ই নয়, প্রণয়ের খুড়শ্বশুর অর্থাৎ প্রণয়ের স্ত্রী সুদেষ্ণার কাকা শেখর শীল জানিয়েছেন, জ্যোতিষবিদ্যায় রীতিমতো পারদর্শী ছিলেন প্রণয়, এ বিষয়ে তাঁর ডিগ্রি পর্যন্ত রয়েছে।

    সে কথা জেনেই তদন্তকারীরা প্রণয়ের জ্যোতিষ–জ্ঞানের সঙ্গে গোটা ঘটনার কোনও যোগসূত্র আছে কি না, সেটা জানতে চাইছেন। সুদেষ্ণার কাকা শেখর আরও জানিয়েছেন, কিছু কাল আগেও প্রণয় ও প্রসূন তাঁদের ব্যবসার কাজে ফ্রান্স ও জার্মানিতে যান। তার পরেও তাঁদের ব্যবসার অবস্থা কী ভাবে খারাপ হলো, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

    প্রণয়ের খুড়শ্বশুর শেখর জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে, গত ডিসেম্বরেই সুদেষ্ণার ভাইয়ের বিয়েতে দে পরিবারের সবাই অংশ নেন। সেই সময়ে তাঁরা যে আর্থিক অনটনে পড়েছেন, তার বিন্দুবিসর্গ আঁচও পাওয়া যায়নি। দু’মাসের মধ্যে কী এমন ঘটল? এটা কেবল সুদেষ্ণা দে–র বাপের বাড়ির লোকজন নয়, তদন্তকারীদেরও জিজ্ঞাস্য। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশের কাছে প্রণয় ও প্রসূন বার বার আর্থিক অনটনের কথা বললেও সবটার পিছনে অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে।

    শনিবার প্রণয় দে–কে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁকে পুলিশ ভর্তি করায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ সূত্রের খবর, দে পরিবারের বাকি দুই সদস্য, প্রণয়ের ছোট ভাই প্রসূন ও প্রণয়ের নাবালক পুত্র প্রতীপকে আজ, সোমবার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে। তার পর পুলিশ ওই দু’জনকে কোনও সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারে। রবিবার প্রসূন দে–র বুকের সিটি স্ক্যান করানো হয়। লালবাজার সূত্রের খবর, প্রণয় ও প্রসূনের শারীরিক অবস্থা ভালো ভাবে খতিয়ে দেখে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতামত জেনে পুলিশ তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে পারে। তবে নাবালক প্রতীপকে কোথায় রাখা হবে? সেই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত পুলিশ নেয়নি।

    বড় বৌ ও ছোট বৌকে খুন করা নিয়ে দুই ভাইয়ের বয়ান কেন মিলছে না, সেটাও বড় একটা খটকার জায়গা বলে মনে হচ্ছে তদন্তকারীদের। প্রণয়ের দাবি, প্রসূন নিজের স্ত্রী রোমিকে খুন করার পর বৌদি সুদেষ্ণাকে খুন করে। তার পর প্রতীপের হাতের শিরা প্রসূন কাটতে গেলে সে চিৎকার করে ওঠে। আবার প্রসূনের বক্তব্য, প্রণয় নিজের স্ত্রী সুদেষ্ণাকে হত্যা করার পর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রোমিকে হত্যা করে। তার পর প্রণয় তাঁর ছেলে প্রতীপের হাতের শিরা কাটতে গেলে সে জেগে গিয়ে চিৎকার করে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতীপ জানিয়েছে, তার কাকা–ই ছুরি দিয়ে তার হাত কাটার চেষ্টা করছিল। তবে পুলিশের বক্তব্য, একা কোনও ভাই খুন করলেও অন্য ভাই তাতে মদত জুগিয়েছেন, খুন করে প্রমাণ লোপাটেরও চেষ্টা করেছেন।

  • Link to this news (এই সময়)