• ঘুরেফিরে বারবার লোকালয়ে কেন বাঘ? উত্তর খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা
    প্রতিদিন | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দেবব্রত মণ্ডল: গত ৬ মাসে সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছে রয়?্যাল বেঙ্গল টাইগার। পরপর যেভাবে নদী, জঙ্গল পেরিয়ে লোকালয়ে ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ শুরু করেছে বাঘমামা তাতে যথেষ্ট আতঙ্কিত এবং চিন্তিত বনদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা। আর ঠিক তেমনই চিন্তিত সুন্দরবনের লোকালয় লাগোয়া গ্রামবাসীরাও। কিন্তু কী কারণে বারবার বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ থেকে বনদপ্তরের আধিকারিকরা। বাঘ লোকালয়ে চলে আসছে না বাঘের এলাকায় লোকালয় হয়ে গিয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক দশক।

    জমিদারের শ্রেণির লোকজন তখন নিজেদের সীমানা বাড়াতে একের পর এক সাফ করে দিয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ। আর সেই এলাকাগুলিতেই বাঘের আনাগোনা বেশি। বিশেষ করে কুলতলি, ঝড়খালি বা সাতজেলিয়ার মতো জায়গা। শুধু তাই নয়, জঙ্গলের মধ্যে যেসব এলাকায় বনদপ্তর জঙ্গল কেটে অফিস তৈরি করেছে সেখানেও ঢুকে পড়ছে বাঘ। যেমন সজনেখালি, নেতিধোপানি বা বনি ক্যাম্পের মতো এলাকা। কারণ, কয়েকদিন আগে এইসব এলাকাতে অবাধে বিচরণ করত বাঘ। এখন সেখানে তৈরি হয়েছে জনবসতি।

    ফলে বাঘের চলাফেরার ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে সমস্যা। আর তার ফলেই বিভিন্ন লোকালয়গুলিতে ঢুকে পড়ছে বাঘ। শুধু কুলতলির মৈপীঠ নয়, কুলতলি, দেউলবাড়ি, রায়দিঘি, বালি, কুমিরমারি, ঝড়খালি ও সাতজেলিয়া-সহ সমস্ত জায়গাতেই দিনের পর দিন হানা দিয়েছে বাঘ। বাঘ ধরা পড়ার পর বিভিন্ন সময় তাদের বিভিন্ন নামও দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে কখনও কখনও বাঘিনির খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে বাঘ। আবার কখনও বা একটি বাঘ জঙ্গলে সহজ শিকার না পেয়ে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। পুরুলিয়ার জিনাত সঙ্গীর খোঁজেই এসেছিল।

    এই একই রকম ঘটনা ঘটেছিল কুমিরমারি এবং ঝড়খালিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনদপ্তরের বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, “বিভিন্ন কারণে বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসতে পারে। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা কারণ থাকতে পারে। কোনও বিশেষ একটি কারণে বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসছে এ কথা ঠিক নয়।” মূলত, বাঘের খাদ্যের সংকট দেখা দিলে অর্থাৎ বাঘ বৃদ্ধ হয়ে গেলে শিকার ধরতে অক্ষম হয়ে পড়লে তখনই সহজ শিকারের জন্যই লোকালয়ে চলে আসে। তাছাড়া দুটি পুরুষ বাঘের মধ্যে জায়গা নিয়ে গণ্ডগোলও বাধে, আবার বাঘিনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে বাঘের মধ্যে গণ্ডগোল দেখা দিলে, বাঘ বা বাঘিনি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে চলে আসে। কখনও ভুল করে লোকালয়ে জঙ্গলের অবস্থান বুঝতে না পেরে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, “প্রকৃতিগত কারণে বাঘের বাসস্থানের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যখন দুটি বাঘের মধ্যে জায়গার অবস্থান নিয়ে গণ্ডগোল বাঁধলে একটি বাঘ নিরাপদ জায়গার জন্য অন্যত্র পালিয়ে আসছে। কখনও বাঘের শিকার ধরার ক্ষমতা কমে গেলে। বা লোকালয়ে জঙ্গল ও গভীর জঙ্গলের অবস্থান বুঝতে না পেরে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।”

    এ বিষয়ে ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার প্রিন্সিপাল ফিল্ড অফিসার অনিল মিস্ত্রি বলেন, “বিভিন্ন কারণে বাঘ লোকালয়ে আসতে পারে। তবে ফেন্সিং ব্যবস্থা যদি ঠিকঠাক থাকে, যদি নিয়মিত সেগুলির পরিচর্যা করা হয়, রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং ফেন্সিং কেটে যদি মৎস্যজীবীরা জঙ্গলে না ঢুকে পড়ে তাহলে বাঘ লোকালয়ে আসা আটকানো যেতে পারে।” গত এক মাসে কুলতলি এলাকা থেকে ধরা পড়েছে দু-দুটি বাঘ। দিনের পর দিন নদী পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে রয়?্যাল বেঙ্গল টাইগার। দুটি বাঘকেই খাঁচাবন্দি করে বনদপ্তর। তার পর ছেড়ে দেওয়া হয় জঙ্গলে। শুধু কুলতলিতে নয়, ঝড়খালি, বাসন্তীর জ্যোতিষপুরে হানা দিয়েছে দক্ষিণরায়। সবমিলিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে লোকালয়ে বাড়ছে বাঘের আনাগোনা।
  • Link to this news (প্রতিদিন)