ছোট থেকেই ধ্যানজ্ঞান ছিল নাচ। দু’চোখে ছিল বড় নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন। ক্যান্সারে বাবার মৃত্যুর পর নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন সংসারের জোয়াল। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কাজের পাশাপাশি নাচের অনুষ্ঠানও চলছিল পুরোদমে। রবিবার নাচের অনুষ্ঠানের জন্যই চন্দননগর থেকে সহকর্মীদের সঙ্গে বিহারের গয়ায় যাচ্ছিলেন তরুণী। সেখানে আর পৌঁছনোই হল না। রাস্তায় ইভটিজ়ারদের খপ্পরে পড়ে সম্মান বাঁচাতে গাড়ির দৌড়। শেষ রক্ষা হল না। মদ্যপ যুবকদের তাড়া খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু হলো বছর ২৬-এর প্রতিভাবান তরুণীর। ইভটিজ়িং থেকে বাঁচতে জীবন দিয়ে দাম চোকালেন তিনি। প্রাণ চঞ্চল মেয়ের এমন পরিণতি মানতেই পারছেন না পাড়া প্রতিবেশীরা।
গয়া যাওয়ার পথে চন্দননগরের তরুণী ও তাঁর সহকর্মীদের ধাওয়া করে মদ্যপ ইভটিজ়ারদের গাড়ি। অভিযোগ, কাঁকসার বুদবুদ পেট্রোল পাম্প থেকে টানা দেড়-দুই কিলোমিটার রাস্তায় তরুণীকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করতে থাকে চার মদ্যপ যুবক। তরুণীর গাড়িকে ধাওয়া করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে তারা। গাড়ির গতি বাড়িয়েও লাভ হয়নি। অভিযোগ, পানাগড় বাজারের রাইসমিল রোডের মুখে তাদের গাড়িটির রাস্তা আটকাতে যায় ইভটিজ়ার তাদের থেকে বাঁচতে গিয়ে ভুল রাস্তায় ঢুকে পড়েন গাড়ি চালক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি উল্টে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর।
দুর্ঘটনার খবর বাড়িতে পৌঁছতেই শোকের ছায়া এলাকায়। বাবাকে হারানোর পর তরুণীর পরিবারে রয়েছেন ছিলেন মা, দিদা ও ঠাকুমা। তাঁর এমন পরিণতির খবর বাড়িতে পৌঁছতেই শোকে পাথর অথর্ব দুই বৃদ্ধা ও প্রৌঢ়া মা। ‘বিশ্বাস করুন, চোখে ভাসছে মেয়েটার মুখটা। এই ক’মাস আগে বাবা মারা গেল। মায়ের গলব্লাডার অপারেশন হল কয়েকদিন আগে। একাই সব সামলাতো মেয়েটা। নাচের প্রোগ্রাম করতে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরেও যেত। বাবা মারা যাওয়ার পর তো যাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছিল। কী যে হয়ে গেল, কী বলি বলুন তো। পরিবারের হাল ধরার কেউ রইল না।’ আফসোসের সুরে জানালেন মেয়েটির কাকিমা।
পাড়ায় ‘মাম’ বলে পরিচিত ছিলেন ওই তরুণী। ভালো ব্যবহার ও পরোপকারী স্বভাবের জন্য পাড়ার সকলের কাছেই প্রিয় ছিলেন তিনি। রাস্তার কুকুরদের খুব ভালোবাসতেন। ডেকে রোজ খাবার খেতে দিতেন, বলে জানিয়েছেন এক প্রতিবেশী। এমন মেয়ের এই পরিণতি মানতে পারছেন না কেউই। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব প্রতিবেশীরা। ‘যাদের দোষে এভাবে অকালে চলে গেল, তারা যেন অবশ্যই শাস্তি পায়’, এখন এই দাবিই জানাচ্ছেন মৃতা তরুণীর আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা।