দিব্যেন্দু সরকার, খানাকুল
ভেঙে গিয়েছে নদীর বাঁধ। সেইসঙ্গে নিয়মমাফিক জল ছেড়েছে ডিভিসিও। তার উপর অকাল বর্ষণ। সব একসঙ্গে ঘটে যাওয়ায়, মূলত সেচ দপ্তরের গাফিলতিতেই অথৈ জলে পড়েছেন খানাকুলের চাষিরা। সময়মতো বাঁধ মেরামতি হলে এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যেতে পারত বলেই মনে করছেন তাঁরা।
ভাঙা নদীবাঁধ দিয়ে ডিভিসির ছাড়া বোরোজল গ্রামে ঢুকে রবিবার সকাল থেকে প্লাবিত করেছে এই সমস্ত এলাকা। আলু ওঠার মুখেই চাষিদের চোখের সামনে প্লাবিত জমি। জলাশয় থেকে ছাড়া জলে ডুবে গেল আরামবাগ মহকুমার খানাকুল দুই নম্বর ব্লকের বলাইচক ও নবীন চক, ২৪ পুর এলাকার বিঘার পর বিঘা আলু চাষের জমি। নতুন করে ক্ষতির মুখে খানাকুল ২ নম্বর ব্লকের আলু চাষিরা।
রবি চাষের মরশুমে কংসাবতী ব্যারেজ–সহ নানা জলাশয় থেকে জল ছাড়া হয়। চাষিদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় মুণ্ডেশ্বরী ও দামোদরের বাঁধ ভেঙে যায়। সেইসব বাঁধ সময়মতো মেরামত না–হওয়ায় বোরো ধান চাষের জন্য ছাড়া জলে প্লাবিত হয় ওই এলাকা। তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার চাষিরা। নদীবাঁধ ভাঙা থাকার কারণেই বোরো ধান চাষের জন্য মুন্ডেশ্বরী নদী থেকে ছাড়া জল বেরিয়ে আলু চাষের জমি ডুবিয়ে দিয়েছে।
এই বিষয়ে আগাম খবর থাকলে হয়তো চাষিরা জমি থেকে আলু তোলার ব্যবস্থা করতেন। বেশি ক্ষতি হয়েছে ভাঙা নদীবাঁধ সংলগ্ন জমিগুলিতে। যে জমিগুলিতে নতুন করে আলু লাগানো হয়েছিল, তাতেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।মবন্যা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে গত বছর থেকে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন আরামবাগ মহকুমার আলু চাষিরা। বন্যায় ধান–সহ অন্যান্য আনাজের যেমন ক্ষতি হয়েছিল, তেমনই নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পাঞ্জাবের যে আলুর বীজ লাগানো হয়েছিল, তারও প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে যায়।
এই বিপদ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আলু চাষিরা জমিতে নতুন করে আলু লাগিয়েছিলেন। আলুর ফলনও ভালো হয়েছিল। আলু তোলার ঠিক মুখেই জমি প্লাবিত হয়ে পড়ায়, আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে যাবেন চাষিরা।ডুবে যাওয়া জমির আলু ফের পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। রবিবার সকাল থেকেই তাঁরা জমি থেকে জল বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই বিষয়ে শ্রীকান্ত সাউ নামে এক চাষী বলেন, ‘হঠাৎ করে জল ছাড়ার ফলে জল চলে আসে জমিতে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে নদীর জলে প্লাবিত হয় বলাইচক।’ চাষিদের বক্তব্য, সরকারি সাহায্য না পেলে তাঁদের পথে বসতে হবে।
কিন্তু জল তো ছাড়া হয়েছে নিয়ম মেনেই। তা হলে কেন এই বিপত্তি?
চাষিরা বলছেন, ভাঙা বাঁধ না সারানোর জন্যই এই ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। কেন বাঁধ সারানো হলো না এত দিনেও। সেই নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিরা। এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে খানাকুল থানার ওসি হামিদুল ইসলাম ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করেন।
এই বিষয়ে খানাকুল ২ নম্বর বিডিও মধুমিতা ঘোষ বলেন, ‘নদীর বাঁধ ভাঙা থাকায় অনেকটা চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুফল বাংলার লোকজন আসছেন। মাঠ থেকে যাতে আলু কেনা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে সব রকম সাহায্য করা হবে চাষিদের। বাঁধ মেরামতের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। সেচ দপ্তরের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বন্যার পর আট–ন’মাস কাটার পরেও কেন বাঁধ সারানো হলো না? এটা কি প্রশাসনিক গাফিলতি নয়? এই নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
এই বিষয়ে বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ উমেশ অধিকারী বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে কাজ করছি।তবে তৃণমূলের লোকজন কোনও ভাবেই উন্নয়ন করতে দেবে না। তাই এলাকার উন্নয়ন থমকেই থাকবে।’