‘৮ মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছি। মেয়েটাকেও কোল থেকে কেড়ে নিল…’, কাঁকসা থানা থেকে বেরনোর মুখে কঁকিয়ে উঠলেন সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। মদ্যপ যুবকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মেয়ের যে এই পরিণতি হবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি। ভাঙা, কান্না জড়ানো গলাতে তিনি বলেন, ‘দোষীদের যেন শাস্তি হয়।’
রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সুতন্দ্রা। সোমবার সকালে তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে খবর যায়, মেয়ে আর নেই। প্রথমে তা বিশ্বাস করতে চাননি তিনি। প্রাণোচ্ছ্বল মেয়ে গয়াতে অনুষ্ঠান করার জন্য হাসিখুশি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। রাস্তায় ইভটিজ়ারদের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েকে জীবন দিতে হয়েছে, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।
সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ কাঁকসা থানায় এসে পৌঁছন তনুশ্রী। তখনও থানাতেই ছিল সুতন্দ্রার নিথর দেহ। কয়েক মিনিট স্তব্ধ থাকার পর ডুকরে কেঁদে ওঠেন এই প্রৌঢ়া। থানা থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি স্বামীকে হারিয়েছি মাত্র ৮ মাস। মেয়েই আমার সব ছিল। যাদের জন্য ওকে চলে যেতে হলো, তারা যেন শাস্তি পায়।’
জাতীয় সড়কে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও। কোন পথে তদন্ত? প্রাথমিক ভাবে সিসিটিভি ফুটেজ ধরেই তদন্তে এগোতে চাইছে পুলিশ। কারা ধাওয়া করেছিল সুতন্দ্রাদের, তা চিহ্নিত করার সব চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। যদিও এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি(কাঁকসা) সুমন কুমার জয়সওয়াল বলেন, ‘গোটা ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, রবিবার রাতে একটি চারচাকা গাড়িতে করে ডান্স ট্রুপের বেশ কয়েকজন সঙ্গীদের গয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন হুগলির চন্দননগরের বছর ২৬-এর তরুণী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের বুদবুদের কাছে কিছু মদ্যপ যুবকের খপ্পরে পড়েন তাঁরা। কয়েকজন যুবক একটি ছোট সাদা গাড়ি করে ধাওয়া করে তাঁদের। অভিযুক্তদের গাড়ি থেকে ভেসে আসছিল লাগাতার কটূক্তি। তাঁদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভুল রাস্তায় ঢুকে পড়েন সুতন্দ্রাদের গাড়ি চালক। পরে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ঘটনায় মৃত্যু হয় সুতন্দ্রার। আহত হন তাঁর সহযাত্রীরাও।