১৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের। তার দিন তিনেক আগেই অসুস্থ, চিকিৎসাধীন শিল্পীর সঙ্গে এসএসকেএম-এ দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিনের কথা মনে করে ফের আরও একবার আবেগে ধরে এল মুখ্যমন্ত্রীর গলা। সে দিন প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, তা সোমবার জানালেন তিনি। এই দিনই পুরসভার বাজেট অধিবেশনে মেয়র ববি হাকিম ঘোষণা করেন ল্যান্সডাউন প্লেসের নাম পরিবর্তনের কথা। ল্যান্সডাউন প্লেস এ বার থেকে ‘প্রতুল মুখোপাধ্যায় সরণি’।
সোমবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে রাজ্যের সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পড়ুয়াদের নিয়ে আয়োজিত বিশেষ সভায় যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কলকাতার হাসপাতালগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কথা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় সদ্য প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের নাম। শিল্পীকে মৃত্যুশয্যায় দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে মন ভার হয়ে গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু’দিন ধরে শিল্পীর জ্ঞান ফিরছিল না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী গিয়ে ডাকতেই চোখ খোলেন তিনি।
সেই ঘটনার কথা মনে করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দু’দিন রেসপন্স করেননি। আমি শুনে ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখি। যদি সাড়া দেন। আমি গিয়ে ডাকলাম, প্রতুলদা, ও প্রতুলদা, আমি মমতা। শুনে দেখি চোখ খুলে তাকালেন তিনি। আর চোখ দু'টো জলে ভরে গেল। সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট বলে একটা কথা আছে না। যেটা অনেক সময় ফিরিয়ে আনে।’ তার পর মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছুক্ষণ শুশ্রুষা করেন তাঁর। আচমকা হার্ট রেট কমে যায় সঙ্গীত শিল্পীর। মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরা আশ্বস্ত করেন, স্ট্রেস হচ্ছে। সাড়া দেওয়ায় ওঁর হার্টে চাপ পড়েছে।
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী শিল্পীকে বলেছিলেন, প্রতুলদা আপনাকে বাংলার গান গাই আবার গাইতে হবে। আপনি ছাড়া কে গাইবে। জবাবে শিল্পী যা বলেছিলেন এদিন শোনালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘আমার কথা শুনে প্রতুলদা দু’হাত তুললেন। আর্শীবাদ করলেন নাকি বুঝলাম না। পরে ইশারায় বোঝালেন তিনি আর গাইতে পারবেন না। তখনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম প্রতুলদা আর পারছেন না যন্ত্রণা সহ্য করতে। এই একটি ছোট্ট ঘটনা আমার মনে ভীষণ রেখাপাত করে।’ এই প্রসঙ্গে তিনি ‘মরণের পারে’ বইয়ে পড়া আত্মার অনুভূতির কথাও বলেন।
সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সম্মানে নয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে প্রশাসন। উল্লেখ্য, প্রয়াত শিল্পীর স্মরণে কলকাতার ল্যান্সডাউন প্লেসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে ‘প্রতুল মুখোপাধ্যায় সরণি’। এদিন পুরসভার বাজেট অধিবেশনে এই কথাই জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিম।