এক নিমেষে শেষ গোটা পরিবার। মহাকুম্ভে যাওয়ার পথে ধানবাদে দুর্ঘটনায় পড়েছিল গড়বেতার একটি পরিবার। বাবা, মা, বোন আগেই মারা গিয়েছিল। পরে মারা যায় ১৩ বছরের সুদীপও। ধানবাদের রাজগঞ্জের সরকারি হাসপাতালে ময়না তদন্তের পরে সুদীপের দেহ নিয়ে সোমবার সন্ধে ৭টা নাগাদ গড়বেতার দিকে রওনা দেয় সাহা পরিবার। বড় জেঠু প্রহ্লাদ সাহা, মেজ জেঠু প্রবীর সাহা এবং গড়বেতা থানার এক পুলিশ আধিকারিক সুদীপের দেহ নিয়ে ফিরেছেন। রাত ১১টা নাগাদ গড়বেতার নলপার বাড়িতে পৌঁছে যান তাঁরা। বাড়ির কাছেই যে শ্মশানে বাবা-মায়ের শেষকৃত্য হয়েছে, তার পাশেই বছর তেরোর সুদীপের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হচ্ছে। রাতে দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম।
গড়বেতার ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ-প্রশাসন, রয়েছেন শাসকদলের নেতারাও। শনিবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই গড়বেতা থানার এক সাব ইন্সপেক্টরকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধানবাদে পাঠিয়েছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। পরিবারের হাতেও ওই রাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা। সোমবার ধানবাদ থেকে সুদীপের দেহ নিয়ে আসার জন্য আত্মীয়দের সঙ্গে গড়বেতা থানার এক এসআই-কে পাঠানো হয় জেলা পুলিশের তরফে। শনিবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পৌঁছনোর পর থেকে রবিবার সকালে প্রণবদের শেষকৃত্য অবধি পরিবারের পাশে ছিলেন গড়বেতা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ। সোমবার দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র নির্দেশে আর্থিক সহায়তাও তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেবাব্রত। সোমবার বিকেলে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে নলপা গ্রামে পৌঁছন মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়, গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরা। প্রশাসনের তরফে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে সোমবার সন্ধ্যায় এই সময় অনলাইনকে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হুগলির গোঘাট থানা এলাকার বাসিন্দা, সম্পর্কে ভায়রা ভাই স্বরূপ সাহার পরিবারের সঙ্গে মহাকুম্ভে যাচ্ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার নলপার বাসিন্দা প্রণব সাহা। শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ ধানবাদের রাজগঞ্জ থানা এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রণব সাহা (৪২), তাঁর স্ত্রী শ্যামলী সাহা (৩৪) এবং বছর পাঁচেকের শিশুকন্যা অন্বেষার। ধানবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল প্রণব-শ্যামলীর ছেলে সুদীপ (১৩)। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ যুদ্ধ শেষ হয় ছোট্ট সুদীপেরও। শুধু প্রণব ও তাঁর পুরো পরিবারই নয়, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় একই গাড়িতে থাকা প্রণবের শ্যালিকা পিয়ালী সাহা (৩০) এবং তাঁর শিশুকন্যা আগমনীর (৬)। ধানবাদের বেসরকারি হাসপাতালে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন পিয়ালীর স্বামী স্বরূপ সাহা (৪৫)।