কাকদ্বীপের জোড়া খুনের মামলায় আগেই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি চেয়েছিলেন আইপিএস আধিকারিক দময়ন্তী সেন। ফলত, প্রশ্ন উঠেছিল - এবার তাহলে ওই ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত 'বিশেষ তদন্তকারী দল' সেই প্রশ্নেরই জবাব পাওয়া গেল আদালতের তরফে।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশ দেন, এবার থেকে ওই মামলার তদন্তের কাজে নেতৃত্ব দেবেন আইপিএস আধিকারিক মুরলীধর শর্মা। আগামী ৪ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই দিনই আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে মুরলীধরকে। সেই রিপোর্টে মামলার তদন্তের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পেশ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৪ মে কাকদ্বীপে এক দম্পতির দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ ওঠে, ঘরে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাঁদের খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় যাঁদের মৃত্যু হয়, তাঁরা হলেন - স্থানীয় সিপিএম কর্মী দেবপ্রসাদ দাস এবং তাঁর স্ত্রী উষারানি দাস। পুলিশ সেই ঘটনার তদন্ত করলেও, সেই তদন্ত প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটি রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বস্তুত, পুলিশের সেই তদন্তে কলকাতা হাইকোর্টও খুব একটা সন্তুষ্ট ছিল না।
সেই সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিচারপতি মান্থা এই মামলায় সিট গঠনের নির্দেশ দেন। যার মাথায় রাখা হয় আইপিএস দময়ন্তী সেনকে।
এরপর রাজ্য সরকারের তরফে সিঙ্গল বেঞ্চের এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়। এবং বিচারপতি মান্থার রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপীল করা হয়। কিন্তু, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
কিন্তু, এরপর দময়ন্তী সেন নিজেই এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়ে আবেদন করেন। তিনি জানান, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি ভালো নেই। চিকিৎসক তাঁকে কোনও ধরনের মানসিক চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাছাড়া, তাঁর গাড়িতে যাতায়াত করার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। তাই তিনি এই মামলা থেকে অব্যাহতি চান।
এই প্রেক্ষাপটে সোমবার উচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, এবার থেকে দময়ন্তী সেনের বদলে সংশ্লিষ্ট চারজনের 'বিশেষ তদন্তকারী দল'-এর নেতৃত্ব দেবেন আইপিএস মুরলীধর শর্মা।
এদিন বিচারপতি ঘোষ তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, ২০২৩ সালে সিট গঠিত হওয়ার প্রায় ৫ বছর আগে কাকদ্বীপের ঘটনাটি ঘটেছে। সিট গঠনের পরও বেশ খানিকটা সময় কেটে গিয়েছে। তাই এত দিন এই মামলার তদন্তে কী কী উঠে এসেছে, সেই বিষয়ে আদালতকে একটি রিপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। তবে, এ নিয়ে যদি মামলাকারীর কোনও আপত্তি থাকে, তাহলে আদালত তাঁর বক্তব্যও শুনবে। সেক্ষেত্রে মামলাকারীর বক্তব্য শোনার পরই প্রয়োজনে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে।