• মোড়া বিক্রিতে লাভ নেই, সঙ্কটে পড়েছেন প্রতাপপুরের শিল্পীরা
    বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: সহজলভ্য প্লাস্টিকের সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের প্রতাপপুরের মোড়াশিল্প সঙ্কটের মুখে পড়েছে। শিল্পীদের আক্ষেপ, বাঁশ দিয়ে তৈরি মোড়ার কদর থাকলেও তা তৈরি করতে যে শ্রম লাগে, তার দাম দিতে ক্রেতারা নারাজ। এই হস্তশিল্পকে বাঁচাতে সরকারি সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছেন শিল্পীরা। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, এই হস্তশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে।


    প্রতাপপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সীতারাম রুইদাস বলেন, আমরা সবসময় ওই হস্তশিল্পীদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। আমরা এলাকায় বাঁশবাগান করার চেষ্টা করব।


    ওই এলাকায় বাদ্যকরপাড়ার প্রায় ১০০টি পরিবার মোড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা বাপঠাকুরদার আমল থেকে এই কাজ করে আসছেন। একসময় বাড়ির ছোটবড় সবাই মোড়া তৈরি করতে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের চেয়ারের পাশাপাশি মোড়া, কুলো সহ নানা সামগ্রী বাজারে চলে এসেছে। ফলে এই হস্তশিল্প কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে মোড়া তৈরির কাঁচা বাঁশ সহ অন্য উপকরণের দামও বেড়েছে। প্রায় ১৫বছর ধরেই মোড়া বিক্রি করে তেমন লাভ হচ্ছে না।


    মোড়া শিল্পী শান্তি বাদ্যকর ও জবা বাদ্যকর বলেন, আমাদের বাদ্যকরপাড়ার মানুষের চাষের জমি নেই। অবশ্য কয়লাখনি অঞ্চল হওয়ায় এলাকায় চাষ কমই হয়। আমরা মো‌ড়া তৈরি করেই সংসার চালাতাম। কিন্তু প্লাস্টিকের সামগ্রীর কারণে আমাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। মোড়ার কদর এখনও আছে। কিন্তু এখন মোড়া তৈরির খরচ অনেকটাই বেড়েছে। একটি বাঁশের দাম হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। নাইলনের দড়ি, রঙ সহ সমস্ত উপকরণের দাম বেড়েছে। একটি মোড়া তৈরি করতে ১০০ টাকার বেশি খরচ হয়। মোড়া তৈরিতে একটা গোটা দিন সময় লাগে। সেই মোড়া কাঁধে নিয়ে গ্রাম ও শহরের অলিগলিতে ঘুরে বিক্রি করতে হয়। এক-একটি মোড়া ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এত টাকা দিয়ে মোড়া অনেকেই কিনতে চান না। লাভ না হওয়ায় আমরা এখন খুব কম মোড়া বানাচ্ছি। রুটিরুজির জন্য ছেলেরা শহরে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করছে। সরকার থেকে আমাদের ২০২০ সালে ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। সরকার থেকে বাঁশগাছের চাষ করা হলে আমরা উপকৃত হব। এই শিল্প চাঙ্গা করার বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপের আশায় রয়েছি।


    বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ওই শিল্পীরা মোড়ার পাশাপাশি বাঁশের তৈরি গৃহসজ্জার অন্য উপকরণ যাতে তৈরি করেন, সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। মোড়া ও গৃহসজ্জার সামগ্রী বিক্রির জন্য আমরা মেলার আয়োজন করি। ইসিএলের পরিত্যক্ত কয়লাখনির ও বনদপ্তরের জমিতে বাঁশ চাষের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)