হাত নয় যেন লোহা! ফুটন্ত রস থেকে অবলীলায় রসগোল্লা তোলেন শঙ্কর
বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুখেন্দু পাল, আউশগ্রাম: উনুনে কড়াইয়ে বসানো রসগোল্লা। টগবগ করে ফুটছে মিষ্টির রস। তাপ বাড়ানোর জন্য আরও কিছু কাঠের টুকরো উনুনে ভরে দিলেন এক কর্মী। আগুনের শিখা উনুনের চারপাশ থেকে বেরিয়ে আসছে। সামনে ছোট চেয়ার নিয়ে বসলেন ৫৮ বছরের শঙ্কর বিশ্বাস। তিনি ফুটন্ত রসে হাত ডোবালেন। দু’টি রসগোল্লা হাতে তুলে কর্মীকে বললেন, আর জ্বাল দিস না, হয়ে এসেছে। এরপর ফের তিনি ফুটন্ত রস থেকে আরও দু’টি রসগোল্লা তুলে নিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতারা অবশ্য অবাক হলেন না। তাঁরা বলেন, বহুদিন ধরেই ওঁকে ফুটন্ত রসে হাত দিতে দেখছি। গরম তেল থেকেও চপ, সিঙারা তুলে নিতে পারেন। ওঁর হাত না, লোহা তা বোঝা দায়। শঙ্করবাবু বলেন, এসব কিছুই অভ্যাস। ৩৫ বছর ধরে মিষ্টির দোকান চালাচ্ছি। প্রথম প্রথম গরম রস বা তেল হাতে লাগলে ফোস্কা পড়ে যেত। এখন কিছুই হয় না। গরম রস থেকে মিষ্টি তোলার পর হাতে জল দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। গরম তেলে হাত দেওয়ার পর কাপড় দিয়ে তা মুছে নিই।
আউশগ্রামের কালিদহ গ্রামে রয়েছে শঙ্করবাবুর মিষ্টির দোকান। বিভিন্ন স্বাদের রসগোল্লা তিনি তৈরি করেন। সব মিষ্টিই তিনিই গরম রস থেকে তুলে পরখ করেন। ওই দোকানের কর্মী সমীর বড়াল বলেন, আমিও অনেক দিন ধরে মিষ্টির দোকানে কাজ করছি। কিন্তু গরম রসে হাত দিতে পারি না। শঙ্করবাবু কীভাবে পারেন বুঝতে পারি না। কোনও দিন ওঁর হাতে ফোস্কা দেখিনি। ওঁর তৈরি মিষ্টির স্বাদ অন্য রকম। সকালের দিকে চপ বা সিঙাড়া তৈরি হয়। সেটিও তিনি হাতে করেই তুলতে পারেন।
ক্রেতারা বলেন, শঙ্করবাবু ছোট থেকে মিষ্টির দোকান চালাচ্ছেন। আগে গ্রামের অন্য জায়গায় মিষ্টির দোকান ছিল। ক্রেতা সমর বৈরাগ্য বলেন, কারও শরীরে একটু গরম কিছু লাগলে জ্বালা শুরু হয়ে যায়। ওঁর ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। এভাবেই হয়তো অভ্যাসের জেরে সব কঠিন কাজ সহজেই করা যায়। শঙ্করবাবু বলেন, হাতা দিয়ে সহজে গরম থেকে মিষ্টি তোলা যায়। কিন্তু রসে মিষ্টি ফুটতে থাকলে নিজের অজান্তেই কড়াইয়ে হাত চলে যায়। গরম মিষ্টি নিজে খেতেও ভালোবাসি। তাই এই মিষ্টির মান সব সময় ভালো রাখার চেষ্টা করি। রসে হাত দিয়ে মিষ্টি তুললে স্বাদ বদল হয় না। শুধু ক্রেতাদের নজর টানা যায়। বাহবা পেতে পেতে সেটাকেই অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছি।