• ঢেউসাগর ভাঙার নির্দেশ, মন খারাপ দীঘার
    বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ভাঙা পড়তে চলেছে দীঘার ঢেউসাগর পার্ক।  দীঘায় আসা পর্যটকদের বিনোদনের একটি অন্যতম জায়গা এই পার্ক। ২০১৯ সালে ১১ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পার্কের উদ্বোধন করেছিলেন। তিনিই নামকরণ করেছিলেন। পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত মুখ সুভাষ দত্ত কোস্টাল রেগুলেশন জোন (সিআরজেড) নিয়ম ভেঙে দীঘায় ঢেউসাগর নির্মাণ নিয়ে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় দীর্ঘ শুনানির পর তা ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনায় আতান্তরে পড়েছে পার্কের দায়িত্বে থাকা প্রাইভেট সংস্থা। এই খবরে মন খারাপ দীঘায় আসা পর্যটক এবং দীঘার হোটেল ও লজ মালিকদেরও।


    দীঘায় পর্যটকদের বিনোদনের যেসব উপকরণ রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম নিউদীঘায় অবস্থিত ঢেউসাগর পার্ক। একেবারে সমুদ্রের গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে এই পার্ক। আর এনিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। বিরাট এরিয়া জুড়ে এই পার্কের মধ্যে টয়ট্রেন, নৌকা বিহারের ব্যবস্থা, বন্য পশু ও পাখিদের মডেল, বড় দোলনা, ময়ূর আদলে নৌকা প্রভৃতি রয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে স্থায়ী মঞ্চ রয়েছে। সন্ধ্যার পর রঙিন আলোয় গোটা পার্কের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বড়দিন, নিউ ইয়ার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পার্কে এন্ট্রি ফি ২০টাকা। এছাড়াও প্রতিটি বিনোদনের আ‌ই঩টেমের জন্য পৃথক ভাড়া দিতে হয়।


    দীঘায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের একটা বড় অংশ ঢেউসাগরে ঢুঁ মারেন। সেই সুসজ্জিত পার্ক ভেঙে ফেলার নির্দেশ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দপ্তর থেকে ঢেউসাগরের প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরির কাজ হয়েছিল। তারপর একটি এজেন্সিকে সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআরজেড এলাকার মধ্যে পার্ক তৈরি হয়। অস্থায়ী নির্মাণের অজুহাতে ওইসব পরিকাঠামো তৈরির কাজ হয়। কীভাবে সিআরজেড লঙ্ঘন করে একেবারে সমুদ্রের গা ঘেঁষে ওই নির্মাণকাজ হয়েছে, তা নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ ছবি মামালকারী জমা করেন। আদালতের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে পাঠানো হয়েছিল। রাজ্য সরকারের একাধিক দপ্তর থেকে রিপোর্ট নেওয়ার পর সিআরজেড-১এ এবং সিআরজেড-২ এলাকায় নির্মাণ কাজ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 


    সোমবার নবদ্বীপ থেকে দীঘায় বেড়াতে এসেছিলেন রেলওয়ে কর্মী মানসী কুণ্ডু ও তাঁর স্বামী দীপক কুণ্ডু। মানসীদেবী বলেন, ঢেউসাগর দীঘার আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। জেসিবি দিয়ে সেই ঢেউসাগর ভেঙে ফেলার খবরটা জেনে সত্যি খারাপ লাগছে। 


    রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার বলেন, সরকারের সঙ্গে একটি এজেন্সি চুক্তি করে সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছে। তারপর ওই সংস্থাই সেটি পরিচালনা করছে। নিশ্চয়ই কোথাও নিয়ম না মেনে নির্মাণ কাজ হয়েছে। তাই আদালত এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। 


    দীঘার নুলিয়া সৌমেন ঘোড়াই বলেন, দীঘায় আগত পর্যটকদের কাছে অন্যতম গন্তব্যস্থল ঢেউসাগর। সেই পার্ক ভেঙে ফেলার রায় শুনে মনটা খারাপ লাগছে। ঢেউসাগর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্ণধার প্রদীপকুমার দাসকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন করেননি। দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী আধিকারিক অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, ন্যাশনাল গ্রিন বেঞ্চ ঢেউসাগর নিয়ে একটা রায় দিয়েছে। রায়ের কপি সবটা দেখা হয়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)