• গুজরাতে বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে, দুই বর্ধমান জেলার ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু
    বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান ও সংবাদদাতা, ইন্দাস: ঘুরতে ভালোবাসতেন বর্ধমানের বাদশাহি রোডের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়(৬১)। কয়েকদিন আগেই সপরিবারে কুম্ভমেলা থেকে ঘুরে এসেছিলেন। গত ১০ফেব্রুয়ারি তিনি আত্মীয়দের সঙ্গে সপরিবারে গুজরাত ঘুরতে যান। সেখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে মঙ্গলবার তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তা হল না। আমেদাবাদ-গুজরাত জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনায় দেবব্রতবাবু, তাঁর স্ত্রী রীতা মুখোপাধ্যায়(৫৬) এবং ছেলে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়(২২) মারা গিয়েছেন। তাঁরা বর্ধমানের বাদশাহি রোডের রবীন্দ্রকাননে থাকতেন। তাঁদের আদিবাড়ি ইন্দাসের কুশমুড়ি। দেবব্রতবাবুর সঙ্গে একই গাড়িতে গিয়েছিলেন তাঁদের দুই আত্মীয় অনিকেত তা(২৪) এবং শুক্লা চট্টোপাধ্যায়(৬৩)। দু’জনই মারা গিয়েছেন। অনিকেতের বাড়ি বর্ধমান শহরের শ্যামলালে। গত বছর মার্চ মাসে তাঁর বিয়ে হয়। দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রীও জখম হয়েছেন। তাঁর বাবা সোমনাথ তা’র অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্লাদেবী আসানসোলের কোর্টমোড়ের বাসিন্দা। এঁরা প্রত্যেকে একই গাড়িতে ছিলেন। 


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাত ঘুরে তাঁরা একটি গাড়িতে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। আমেদাবাদ-গুজরাত জাতীয় সড়কে ডাম্পারের ধাক্কায় তাঁরা মারা যান। দেবব্রতবাবু জৌগ্রাম হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। গত অক্টোবর মাসে তিনি অবসর নিয়েছেন। তাঁর ছেলে ঋতব্রত কলকাতায় কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। দেবব্রতবাবুর আত্মীয় রেখা মুখোপাধ্যায় বলেন, রীতা রবিবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ ফোন করেছিলেন। তারপরই তাঁরা গাড়িতে উঠছিলেন। সন্ধ্যার পর জানতে পারি, ওদের গাড়ির সঙ্গে ডাম্পারের ধাক্কা লেগেছে। গাড়িতে মোট ১০জন ছিলেন। পাঁচজন মারা গিয়েছেন।


    দেবব্রতবাবুর দাদা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, বেড়ানোই ওর নেশা ছিল। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর হাতে প্রচুর সময়। সেকারণে বেশ কিছুদিন গুজরাতে থেকে ফেরার কথা ছিল। ফেরার পথে সব শেষ হয়ে গেল। ও চাকরি সূত্রে বর্ধমানে গিয়েছিল। ভাড়াবাড়িতে থাকত। পরে বাদশাহি রোডে বাড়ি কিনেছিল।


    এদিন বাদশাহি রোডে গিয়ে দেখা গেল, পাড়ায় শোকের আবহ। প্রতিবেশী মহুয়া রায় বলেন, পরিবারের সকলেই খুব ভালো ছিলেন। পাড়ার সবার সঙ্গে মিশতেন। এভাবে ওদের মৃত্যু হবে কেউ ভাবতে পারিনি। পুরো বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল। পুলিস জানিয়েছে, ঘরের সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের আত্মীয়রা বর্ধমানে এলে ঘরের চাবি দেওয়া হবে। তাঁদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন সরস্বতী রাজবংশী। তিনি বলেন, দু’দিন আগে ফোন করে ঘর পরিষ্কার করার জন্য বলেছিল। সেইমতো প্রতিটি রুম পরিষ্কার করে রেখেছিলাম। কিন্তু ওরা আর ফিরবে না। সোমবার সকালে বাড়িতে পুলিস আসার পর দুর্ঘটনার খবর পাই।


    এদিন শ্যামলালে মৃত যুবকের বাড়িতে যান এলাকার বিধায়ক খোকন দাস, বর্ধমান শহরের তৃণমূলের সভাপতি তন্ময় সিংহরায় সহ অন্যানরা। তন্ময়বাবু বলেন, মৃত এবং জখমরা সকলেই দেবব্রতবাবুর আত্মীয়। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)