রেষারেষির জের! পানাগড়ে গাড়ি উল্টে মৃত্যু চন্দননগরের তরুণীর
বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল ও সংবাদদাতা, মানকর: রবিবার গভীর রাতে পানাগড়ে এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় (২৭), বাড়ি হুগলি জেলার চন্দননগরের নারুয়া রায়পাড়ায়। বিহারের গয়ায় একটি অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার পথেই গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। যুবতীর গাড়িতে থাকা সহকর্মীরা দাবি করেছিলেন, সুতন্দ্রাকে টিজ করার পাশাপাশি তাঁদের গাড়ি ধাওয়া করেছিল দুষ্কৃতীদের একটি গাড়ি। তারা তাঁদের গাড়িকে একাধিকবার ধাক্কাও মারে। তারপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের গাড়িটি উল্টে যায়। যদিও পুলিসের দাবি, কোন উত্যক্ত বা কটূক্তি করার ঘটনা ঘটেনি। লিখিত যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতেও উত্যক্ত করার কোন উল্লেখ নেই। এই দুর্ঘটনা হয়েছে রেষারেষি করার জেরে। বরং সুতন্দ্রার গাড়িটিই ধাওয়া করছিল অপর গাড়িটিকে, তা দেখা গিয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিস কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, কোন ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। দুটি গাড়ির মধ্যে রেষারেষি হচ্ছিল। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
সোমবার সকালে সংবাদ মাধ্যমের সামনে মৃত যুবতীর সংস্থার কর্মী মিন্টু মণ্ডল চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, গলসি থানার ভাসাপুল এলাকার পেট্রল পাম্প থেকে তেল ভরে জাতীয় সড়কে উঠতেই একটি সাদা গাড়ি তাঁদের পিছু ধাওয়া করতে থাকে। ওই গাড়ির আরোহীরা চালকের পাশের আসনে বসে থাকা ম্যাডামকে (সুতন্দ্রা) ‘টিজ’ করতে থাকে, অশ্লীল ইঙ্গিতও করছিল। জিটি রোড ধরে আসার সময় পানাগড় বাজারে সাদা গাড়িটি ফের ধাক্কা মারে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় আমাদের গাড়ি। তাড়া করে আসা পাঁচ দুষ্কৃতী তখন চম্পট দেয়। জখম অবস্থায় সুতন্দ্রাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠতেই বাড়তি তৎপরতা দেখায় পুলিস। পুলিস জানতে পারে, অভিযুক্তদের গাড়িটি পানাগড়ের কাবাডি পট্টির এক ব্যবসায়ীর। তাঁর বাড়িতেও হানা দেয় পুলিস। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক আত্মীয়কেও ধরে আনে। বুদবুদ ও পানাগড় থানা এলাকায় রাস্তার মধ্যে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখে পুলিস। তদন্ত চলাকালীনই কাঁকসা থানায় হাজির হন সুতন্দ্রার মা তনুশ্রীদেবী। তিনি বলেন, আট মাসে আগে স্বামীকে হারিয়েছি, এখন মেয়ে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর সুতন্দ্রার দেহ নিয়ে পরিবারের লোকজন চন্দননগর রওনা দেন। বর্ধমান পার হওয়ার সময় তাঁরা খবর পান, মৃতের সহকর্মীদেরই থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। ফের সুতন্দ্রার মৃতদেহ নিয়ে তনুশ্রীদেবী কাঁকসা থানায় হাজির হন। থানাতেই পুলিস কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, কমিশনার অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেছেন। উনি জানিয়েছেন, সবদিক তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে আনে পুলিস। সেখানে দেখা যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের গাড়িটি সুতন্দ্রাদের বাহনের আগে যাচ্ছে। পুলিস দাবি করে, এটা রেষারেষির ঘটনা। প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় সড়কের উপর টানা কুড়ি কিলোমিটার ধরে এমন রেষারেষিই পুলিসের নজরে এল না কেন!