• সুতন্দ্রার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ নারুয়া
    বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: উদীয়মান নৃত্যশিল্পীর অকাল মৃত্যুকে ঘিরে শোকস্তব্ধ চন্দননগরের নারুয়া রায়পাড়া। সেইসঙ্গে দিনভর শোনা গিয়েছে, বিচারের দাবি। রবিবার রাতে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে দুর্গাপুরের পানাগড়ে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয় চন্দননগরের তরুণী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (২৭)। পরিবারের অভিযোগ, ইভটিজারদের গাড়ির তাড়ায় তাঁর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের তরফে জাতীয় সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, ইভটিজিংয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। রেষারেষির জেরে দুর্ঘটনা ঘটেছে।  রাতেই দুর্ঘটনার খবর এসে পৌঁছয় মা তনুশ্রীদেবীর কাছে। ঠাকুমা আর দিদার কাছ থেকে প্রতিবেশীরা সকালে সব জানতে পারেন। তারপর থেকে শোকাচ্ছন্ন রায়পাড়া। দিনভর বিলাপের সুর শোনা গিয়েছে চট্টোপাধ্যায় বাড়ি থেকে। আর প্রতিবেশীরা উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ।


    আটমাস আগে মারা গিয়েছেন সুতন্দ্রার বাবা। সেই শোকের পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার আগেই চলে গেলেন বাড়ির একমাত্র তরুণী সদস্য। চলে গেলেন প্রৌঢ়া ঠাকুমার আদরের ‘মাম’। বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ফলে, শোকাকুল পরিবার। শোক আর ক্ষোভের মাঝেই ছিল স্মৃতিচারণের আবহ। নৃত্যশিল্পী তরুণীর মিঠে ব্যবহারের কারণে অনেকেই তাঁকে স্নেহ করতেন। স্বভাবও ছিল নরমসরম। নাচের অনুষ্ঠান না থাকলে রাতে পথকুকুরদের খাওয়ানো ছিল প্রাত্যহিক কাজ। রায়পাড়ার বাড়িতে সুতন্দ্রা তাঁর মা, ঠাকুমা আর দিদাকে নিয়ে থাকতেন। সোমবার বাড়িতে ছিলেন দুই প্রৌঢ়া। মা তনুশ্রীদেবী গিয়েছিলেন দুর্গাপুরে। তরুণী মেয়ের নিথর দেহ ফিরিয়ে আনতে। ভাষা হারিয়েছিলেন বাড়িতে থাকা দুই প্রৌঢ়াও। 


    দুপুরে বাড়িতে এসেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলার তথা সুতন্দ্রার প্রয়াত বাবার সহপাঠী মোহিত নন্দী। তিনি বলেন, সুতন্দ্রার বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় রেলের ঠিকাদার ছিলেন। সদ্য তিনি প্রয়াত হয়েছেন। বছর ঘোরার আগেই তাঁর মেয়ের মৃত্যু হল। তাও এমন একটি ঘটনার জেরে, যা কিছুতেই মানা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা সুতন্দ্রার মা মেয়েকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচছিলেন। প্রতিবেশীদের একাংশ এদিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, পানাগড়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে একদল ইউটিজার একজন তরুণীকে কার্যত খুন করে দিল। পুলিস কী করছিল? এক প্রতিবেশী বলেন, শুনেছি অনেকটা তাড়া করে ইউটিজাররা সুতন্দ্রার গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছিল। রাস্তায় পুলিস থাকে, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে ক্যামেরা থাকে। তারপরেও এমন ঘটনা ঘটে কি করে! আমরা দুষ্কৃতীদের শাস্তি চাই। রাতের সেই দুর্ঘটনায় গাড়ির চালক সহ আরও দু’জন সহাযাত্রী বেঁচে গেলেও বাঁচেননি সুতন্দ্রা। উদ্যমী এক নৃত্যশিল্পী, যিনি একক উদ্যোগে নাচের দল গড়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল, দলের অনেক নাম হবে। সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।   নারুয়ায় সুতন্দ্রার বাড়ি।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)