নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আম-বাঙালির জনপ্রিয় পর্যটন ডেস্টিনেশন দীঘা। সেখানেই মাথা তুলেছে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ! এর মধ্যে রয়েছে ঢেউসাগর পার্কও। এমনই অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় এবার ঢেউসাগর সহ দীঘার উপকূল ঘেঁষা সমস্ত অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।
উপকূল আইন উপেক্ষা করে দীঘায় একাধিক বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলার দীর্ঘ শুনানির পর বিচারপতি অমিত স্থালেকর ও বিশেষজ্ঞ সদস্য অরুণকুমার বর্মার বেঞ্চ জানিয়েছে, দীঘায় কোস্টাল রেগুলেশন জোন বা সিআরজেড-ওয়ান(এ)-এর আওতাধীন এলাকায় গড়ে ওঠা সমস্ত বেআইনি নির্মাণ তিন মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে।
২০১৯ সালে ১১ডিসেম্বর ঢেউসাগর পার্কের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে একটি এজেন্সি পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। সুসজ্জিত এই উদ্যানে রয়েছে খেলাধুলো ও বিনোদনের নানা উপকরণ। টয় ট্রেন, নৌকা বিহারের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সুউচ্চ দোলনা, পশুপাখির মডেলে সুসজ্জিত এই উদ্যান। আছে খাবারের দোকান, কনফারেন্স রুম এবং একটি সুদৃশ্য ময়ূরপঙ্খী নৌকা। সপ্তাহান্তে সেখানে নাচ-গান সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। প্রথমে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর পার্কের পরিকাঠামো তৈরির কাজ করে। পরে সৌন্দর্যায়নের দায়িত্ব পায় একটি সংস্থা। অভিযোগ, সমস্ত নির্মাণই উপকূল আইন ভেঙে করা হয়েছে। আদালতও শেষ পর্যন্ত ওই সব নির্মাণকে বেআইনি বলে গণ্য করল।
মামলাকারী সুভাষ দত্ত অভিযোগে জানিয়েছিলেন, দীঘার ঐতিহ্যবাহী ঝাউবনের বিশেষ কার্যকারিতা ছিল। ভূমিক্ষয় রোধ করতে প্রাকৃতিক নিয়মেই গড়ে উঠেছিল ওই ঝাউবন। অথচ তা ধ্বংস করে বেআইনি নির্মাণ গড়ে তোলা হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, দীঘা-শংকরপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নথি অনুযায়ী দীঘায় ৬০০টি হোটেলের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি হোটেল ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোনও ধরনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে তারা প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাচ্ছে। এই কাজ চলতে থাকলে অচিরেই দীঘা জলশূন্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া, বেআইনি নির্মাণের জন্য দীঘার বহু প্রাচীন বালি স্তূপের অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ঢেউসাগর ও অনান্য বেআইনি নির্মাণ সহ যাবতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে সত্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। সেই কমিটি গোটা এলাকা পরিদর্শনের পর ঢেউসাগর সহ একাধিক নির্মাণকে বেআইনি বলে চিহ্নিত করে রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আগামী তিন মাসের মধ্যে বেআইনি নির্মাণগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিল ট্রাইব্যুনাল। -ফাইল চিত্র