সংবাদদাতা, কল্যাণী: হাতে বানানো স্কুটার। কাঠ দিয়ে তৈরি। তবে মোটেও আলমারির মাথায় রাখার খেলনা গাড়ি নয়। এ স্কুটার রাস্তায় ছোটে।
‘কাঠের স্কুটার!’ মশকরা হচ্ছে? শুনে তো সুকুমার রায়ের ‘বুড়ির বাড়ি’ কবিতা মনে পড়ে যাচ্ছে-‘কাঁটা দিয়ে আঁটা ঘর-আঠা দিয়ে সেঁটে/ সুতো দিয়ে বেঁধে রাখে থুতু দিয়ে সেঁটে...’ এরকম ভাবলে কিন্তু ঠকতে হবে। এ স্কুটার নিয়মিত, রীতিমতো গতিতে ছোটে চাকদহের বেলেপাড়ায়।
সে পাড়ারই বাসিন্দা স্বপন সূত্রধর। তিনি একটি বিশ বছরের পুরনো ‘প্রায় বাতিল’ স্কুটার মেরামত করেছেন মেহগিনি কাঠ দিয়ে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। গাড়িটি বানিয়েছেন অদ্ভুত কৌশলে। কাঠগুলি প্রয়োজনে খুলে রাখা যায়। প্রয়োজন পড়লে জুড়েও দেওয়া হয়। তাঁর স্কুটারটি অচিরেই দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছে। বেলেপাড়ার বাড়িতে নিত্য ভিড় জমাচ্ছে অনেকে।
বছর কুড়ি আগে বাবাকে এই স্কুটার উপহার দিয়েছিলেন স্বপন সূত্রধর। বাবা মারা যাওয়ার পর সেটি বাড়িতে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। একদিন সারাই করতে গ্যারাজে নিয়ে যান স্বপন। তবে অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু যন্ত্রাংশ ও বডির অংশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না। পেলেও অনেক দাম চাইছিলেন দোকানদাররা। এরপর মাথা খেলাতে শুরু করেন রাজমিস্ত্রি স্বপন। বাড়িতে ছিল ভালো মানের মেহগিনি কাঠ। তা মাপ মতো কেটে তার দিয়ে বেঁধে স্কুটার চলনসই করে ফেলেন। বেরিয়েও পড়েন রাস্তায়। তারপর দেখা গেল, লজঝড়ে স্কুটার অনায়াসেই দৌড়চ্ছে। চাকদহের রাস্তায় রাস্তায় সেটি নিয়ে ঘুরছেন স্বপন। অনায়াসে সে স্কুটার থেকে খুলে রাখা যায় কাঠ।
স্বপন বলেন, ‘বাবার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই উদ্যোগ। এখন রাস্তায় অনেকে মোবাইলে ছবি তুলে রাখছেন। পুলিসও কাঠের স্কুটার বলে চালাতে কিন্তু নিষেধ করেনি।’ এতদিন কাঠের তৈরি ঘোড়ার গাড়ি-গোরুর গাড়ি দেখেছে বাংলা। এবার কাঠের স্কুটার! চাকদহে গিয়ে বানানোর কৌশল স্বপনবাবুর কাছ থেকে শিখে নিলে অনেক বাতিল দু’চাকা ফের হয়ে উঠবে চলনসই। বেলেপাড়ায় যাওযায় ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? - নিজস্ব চিত্র