• ‘কেউ ইভটিজ়িং করেনি’, হঠাৎ সুর বদল সুতন্দ্রার সঙ্গীদের, হাইওয়ে দুর্ঘটনায় একাধিক ‘গ্রে স্পট’
    এই সময় | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান, তার মধ্যেই সুতন্দ্রার সঙ্গীদের ‘সুর বদল’? একটি সাদা রঙের ক্রেটা এসইউভি থেকে জনা পাঁচেক যুবক চন্দননগরের বাসিন্দা সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় (২৭)-কে উত্যক্ত করছিল, সোমবার দুর্ঘটনার খবর সামনে আসার পর থেকেই এই অভিযোগ তুলে আসছিলেন সুতন্দ্রার সঙ্গীরা—বিশেষত তাঁর গাড়ির ড্রাইভার। কিন্তু পুলিশের কাছে অভিযোগে কটূক্তি বা ইভটিজ়িংয়ের কোনও উল্লেখ করেননি তাঁরা। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে আদতে কী ঘটেছিল রবিবার রাতে? উঠছে বিবিধ প্রশ্ন।

    সকালে অভিযোগ ছিল ইভটিজ়িংয়ের, পুলিশের কাছে তা জানানো হলো না কেন?

    নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে রবিবার রাতে গয়া যাচ্ছিলেন সুতন্দ্রা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী মিন্টু পাল, প্রদীপ দত্ত। যাঁরা দু'জনেই হুগলির বাসিন্দা। এ ছাড়াও ছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা মন্টু ঘোষ। গাড়ি চালকের আসনে ছিলেন ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা রাজদেও শর্মা। সোমবার সকালে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার খবর সামনে আসার পর সকালের বয়ানের প্রায় ৯০ ভাগের বেশি মিল ছিল। 

    প্রত্যেকেই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, মাঝ রাতে গলসি সংলগ্ন এলাকায় একটি পেট্রল পাম্প থেকে তেল ভরে তাঁরা হাইওয়েতে ওঠার পরেই একটি সাদা রঙের এসইউভি তাঁদের চেজ় করতে শুরু করে। সেই গাড়িতে পাঁচজন যুবক ছিল বলে অনুমান সুতন্দ্রার সঙ্গীদের। ওই যুবকরা মদ্যপ ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা। সেই গাড়িটি থেকে সুতন্দ্রাকে ক্রমাগত আপত্তিকর ইঙ্গিত করা হচ্ছিল। ওই যুবকদের হাত থেকে বাঁচতেই এক্সেলেটরে চাপ বাড়ান সুতন্দ্রার গাড়ি চালক। কিন্তু পথে গাড়ি উল্টে গিয়ে মৃত্যু হয় সুতন্দ্রার, সকাল থেকে এই কথাই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়ে এসেছেন তাঁর সহকর্মীরা। 

    কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী জানান, এখনও পর্যন্ত দু’টি গাড়ির রেষারেষির অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। তাদের পাওয়া তথ্যে ইভটিজ়িংয়ের কোনও ঘটনা ঘটেনি। যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনিও মৃতের গাড়িতেই ছিলেন। সেই অভিযোগে কটূক্তির কোনও উল্লেখ নেই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সকাল থেকে সংবাদ মাধ্যমের সামনে সরব থাকলেও পুলিশের কাছে কেন ইভটিজ়িংয়ের অভিযোগ তুললেন না সুতন্দ্রার গাড়ি চালক বা সঙ্গীরা?

    কে কাকে চেজ় করছিল?

    কোন গাড়ি কাকে ধাওয়া করছিল? এই ঘটনায় তা যেন এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। মৃতার গাড়ির চালক রাজদেও শর্মা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন, সাদা এসইউভি-তে থাকা মদ্যপ যুবকদের হাত থেকে সুতন্দ্রাকে বাঁচাতে গাড়ি ছুটিয়েছিলেন তিনি। 

    পুলিশ জানায়, সিসিটিভিতে যা দেখা গিয়েছে, তাতে সুতন্দ্রার গাড়ি অন্য একটি গাড়িকে চেজ় করছিল। দুর্ঘটনার সময়ে সাদা গাড়িটি আগে ছিল। সুতন্দ্রাদের গাড়ির চালক রাজদেও শর্মা জানিয়েছিলেন, সাদা গাড়িটি তাঁদের ওভারটেক করে স্লো হয়ে যায়। সেই গাড়িটি ডান দিকের ইন্ডিকেটর জ্বালিয়ে কাচ নামিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা এগোতে গেলেই ধাক্কা দেয় সাদা গাড়িটি। পুলিশের দেখানো দু'টি সিসিটিভি ফুটেজে সুতন্দ্রাদের গাড়ি এসইউভির পিছনে ছিল। বাকি রাস্তা কে কাকে ধাওয়া করেছিল? উঠছে প্রশ্ন।

    কেন পালাল ওই সাদা গাড়ির চালক-আরোহীরা? কারা ছিল ওই গাড়িতে?

    এই দুর্ঘটনার পর থেকেই এসইউভি-র আরোহীরা গাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কেন তারা সেখান থেকে পালিয়ে গেল? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সুতন্দ্রার পরিবারের প্রশ্ন, এত সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও কেন এখনও পুলিশ চিহ্নিত করতে পারল না যে ওই গাড়িতে কারা ছিল? কেন ওই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা এখনও পুলিশি নাগালের বাইরে? জাতীয় সড়কে রেষারেষির ঘটনা কেন টহলদার পুলিশদের নজর এড়াল,  উঠছে সেই প্রশ্নও। 

    পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, ওই যুবকদের দল স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা। তারা কাবাড়িওয়ালা হিসেবে পরিচিত এবং ছাঁট লোহার কারবার করেন। এসইউভির মালিক বাবলু যাদবও ব্যবসায়ী। তিনি ঘটনার সময়ে গাড়িতে ছিলেন না। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, তার সঙ্গে পুলিশের একাংশের 'সুসম্পর্ক' সকলের জানা। সেক্ষেত্রে কি কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে? যদিও সিপি এই জল্পনা উড়িয়ে স্পষ্ট সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেছেন, ‘কাবাড়িওয়ালাদের স্বার্থে একজন কমিশনার মিথ্যে কথা বলবেন?’

  • Link to this news (এই সময়)