এই সময়: আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ওষুধ মেশানো পায়েস তাঁরা খেয়েছিলেন ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে। তবে তার তিন দিন আগে থেকেই রোজ রাতে পায়েস খাচ্ছিলেন ট্যাংরার দে পরিবারের ছ’জন।
বড় ভাই প্রণয় দে–র কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রথমত, বাড়ির প্রাপ্তবয়স্ক চার জন এই ভাবে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত, প্রতীপ ও প্রিয়ংবদা— বাড়ির দুই নাবালক–নাবালিকার যাতে সন্দেহ না–হয়, সে জন্যও তিন দিন আগে থেকে পায়েস খাওয়া হচ্ছিল বলে তদন্তকারীদের ধারণা। এবং ১৭ তারিখ রাতে ওই পায়েসে মেশানো হয় প্রচুর পরিমাণে হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের ও ঘুমের ওষুধ। ওই ওষুধের গন্ধ প্রিয়ংবদা ও প্রতীপ যাতে না–পায়, সে জন্য তাতে মেশানো হয়েছিল তুলসী পাতা ও নিমপাতা।
তদন্তে জানা গিয়েছে, বড় ভাই প্রণয় দে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত। তাঁর ঘর থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়া নিয়ন্ত্রণের মেশিনও মিলেছে। প্রণয় ঘুমের ওষুধ খেতেন নিয়মিত। পুলিশের সন্দেহ, প্রণয়ের প্রেসক্রিপশনই বিভিন্ন দোকানে দেখিয়ে ঘুমের একগাদা ওষুধ কেনা হয়েছিল। প্রণয়ের ছেলে প্রতীপ ও প্রণয়ের ছোট ভাই প্রসূনকে সোমবার ইএম বাইপাস লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।
তাঁদেরও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছে। যেখানে শনিবার থেকে ভর্তি রয়েছেন প্রণয়। বড় ভাই ও ছোট ভাই এবং বড় ভাইয়ের নাবালক পুত্র এখন রয়েছেন একই জায়গায়। তবে তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, দুই ভাইয়ের এখন যা মানসিক অবস্থা, তাতে তাঁরা ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন এবং সে জন্য তাঁদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে এনআরএসে। তাঁদের কাউন্সেলিং করানোরও চিন্তাবভাবনা করছে পুলিশ।
তবে পুলিশ সূত্রের খবর, প্রসূন ও প্রণয় সুস্থ হলেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, দুই ভাইয়ের এক জন খুনে সরাসরি জড়িত, প্রমাণ লোপাটে ভূমিকা রয়েছে অন্য ভাইয়ের।
তদন্তকারীরা এখন জেনেছেন, ১০ কোটি নয়, ট্যাংরার অটল সুর রোডের সম্পন্ন ব্যবসায়ী পরিবার বলে পরিচিত ওই দে পরিবারের বাজারে ধার হয়েছিল ১৫ কোটিরও বেশি টাকা।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতীপের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তাকে নিয়ে খুড়তুতো দিদি প্রিয়ংবদার ঘরে যান তার কাকা প্রসূন। সেখানে প্রতীপের হাতের শিরা প্রসূন কাটার চেষ্টা করেন। এমনকী, সেখানে প্রসূন নিজের হাতের শিরাও কাটেন বলে পুলিশকে প্রতীপ জানিয়েছে। পুলিশের দাবি, প্রিয়ংবদার ঘরে রক্তের দাগ মিলেছে। অথচ প্রিয়ংবদাকে হাতের শিরা বা গলা কেটে খুন করা হয়নি।
প্রিয়ংবদার ঘরে রক্তের দাগ মেলার রহস্যের জট প্রতীপের বয়ানেই খুলল বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। তবে প্রণয় কেন নিজের হাত কাটলেন না? পুলিশের কাছে প্রণয়ের দাবি, ওটা করা তাঁর সাহসে কুলোয়নি। আত্মহত্যার বিভিন্ন পরিকল্পনা যখন ব্যর্থ হলো, তখন শেষ পর্যন্ত গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে তিন জন আত্মঘাতী হবেন— এমনটাই তিনি ভেবেছিলেন বলে পুলিশের কাছে প্রণয় দাবি করেছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ১৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য যখন বাড়ি থেকে বেরোন, তখন দে বাড়ির একটি নয়, দু’–দু’টি রেফ্রিজারেটর ছিল খাবারে ঠাসা।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতীপ সুস্থ হলে তাকে কোনও হোমে রাখা হবে। কারণ, দে পরিবারের কোনও আত্মীয় তার দায়িত্ব নিতে রাজি নন। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতিরও প্রয়োজনীয়তা নেই বলে পুলিশের বক্তব্য। তবে প্রতীপ এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। প্রতীপকে রাখার জন্য কলকাতা পুলিশ বিভিন্ন হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।