চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করতেই মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের বেতনবৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ তুললেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তিনি ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে "ফেস্ট" আয়োজন করার জন্য দু'কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করাকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজ্যেরই এই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক।
কী লিখেছেন শুভেন্দু?
বিরোধা দলনেতা লেখেন, "আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার বোনটি আজও বিচার পাননি। বোন অভয়ার বাবা মা প্রতিদিন বিচারের দাবীতে মহামান্য আদালতের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। বোন অভয়ার সহকর্মী চিকিৎসকরা এখনও বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ও সংঘবদ্ধ। এরকম একটা প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী ধনধান্য স্টেডিয়াম থেকে সরকারি চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন যা আদপে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার এক সুষ্পষ্ট পরিকল্পিত ছক।"
"আর জি কর ধর্ষণ কাণ্ড স্বাধীন ভারতে ঘটা পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে কালিমালিপ্ত অধ্যায়। সরকারি চিকিৎসকদের আন্দোলনের ফলে দেশে বিদেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ পুড়েছে। রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জীর্ণ দশা দেশের সামনে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে, যা অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অস্বস্তিকর। আজ সরকারি চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণার ফলে চিকিৎসকদের বেতন যে যৎসামান্য বেড়েছে তার সাথে যে পরিমাণ সামান্য শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেয় তা যোগ করে মাসের শেষে যে টাকা তারা হাতে পাবেন তা দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে একই পদে কর্মরত চিকিৎসকরা যে বেতন পান তার থেকে অনেকটাই কম, সুতরাং এই বেতন বৃদ্ধিতে সরকারি চিকিৎসকরা উপকৃত হবেন না। আর নার্স, স্বাস্থ্য কর্মচারীরা ও এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োজিত হাসপাতালের কর্মচারীগণ এই বেতন বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হলেন তাদের বিষয়ে সরকারের কোনও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় না। "
এছাড়া সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি চিকিৎসকদের চিকিৎসার কাজ থেকে জোর করে ডেকে এনে একটি সভায় উপস্থিত করানোকেও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, "রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল গুলিতে রোগীরা পরিষেবা পেলেন না, এতে ওনার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। আসলে তিনি নিজের ভাষণ শোনাতেই চিকিৎসা পরিষেবা থেকে চিকিৎসকদের বিরত রেখে একটি কর্মব্যস্ত দিনে এমন একটি সভা করলেন।"
মমতা ব্যনার্জী এছাড়াও প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে "ফেস্ট" আয়োজন করার জন্য দু'কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। বিগত দশ বছর ধরে মেডিক্যাল কলেজ সহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ গুলিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। এত দিন শাসকদলের ছাত্র নেতারা ফেস্টের টাকা নয়ছয় করতো, এ বার মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির লাইসেন্স দিয়ে দিলেন। রোগী পরিষেবা যেখানে নিম্ন মানের সেখানে এই অনুদান মানানসই? রোগীদের স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, সেখানে ২ কোটি টাকা ফেস্টের জন্য অনুদান! এটা কি নির্বাচনের আগে ঘুষ?
মন্ত্রী শশী পাঁজার নেতৃত্বে চিকিৎসকদের সংগঠন তৈরি করা আসলে ডাক্তারবাবুদের আন্দোলন থেকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিজেদের সংগঠন ভূমিষ্ঠ করার উদ্যোগ, যা আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মধ্যে সুষ্পষ্ট বিভাজন তৈরী করার চক্রান্ত মাত্র।মমতা ব্যনার্জী আসলে ভয় পেয়েছেন। তিনি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তার সরকারের অপশাসন, তোষণের রাজনীতির কারণে সমাজের একটা বড়ো অংশের ভোট তার বিরুদ্ধে যাবে, তাই সরকারি চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধি, মেডিক্যাল কলেজগুলিকে দু'কোটি টাকা এই সব ঘোষণা ২০২৬ বিধানসভার প্রাক্কালে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার একটা সুচতুর কৌশল মাত্র।