বকেয়া শোধে সম্পত্তি বিক্রি পুরসভার! শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডেই বাকি রয়েছে চার কোটি টাকা
বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা জলপাইগুড়ি পুরসভার। দেনায় জর্জরিত তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। বকেয়া শোধে শেষমেশ সম্পত্তি বিক্রির পথে হাঁটতে চলেছে পুরসভা। সূত্রের খবর, শুধুমাত্র পিএফেই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। ওই বকেয়া শোধের জন্য পুরসভাকে বারবার চিঠি দিচ্ছে পিএফ কর্তৃপক্ষ। এদিকে, প্রতি মাসেই অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীদের পেনশন দেওয়া ঘিরেও টান পড়ছে তহবিলে। তার উপর রয়েছে কয়েকশো অস্থায়ী কর্মীর মাইনে। সঙ্গে বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রভিডেন্ট ফান্ড চালুর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সাফাইকর্মীরা। সোমবার তাঁরা পুরসভায় এসে বিক্ষোভও দেখান। বেতন বৃদ্ধি না হলে শহরে সাফাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব, তার পথ খুঁজতে গিয়েই প্রাথমিকভাবে নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।
জলপাইগুড়ি পুরসভা সূত্রের খবর, দিনবাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য যে পাঁচতলা ভবন রয়েছে, তার উপরের দু’টি তলা বিক্রি করে পুরসভার তহবিলে মোটা টাকা ঢোকানো যায় কি না, তা নিয়ে প্রস্তাব জমা পড়েছে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বৈঠকে। একইভাবে পান্ডাপাড়া বউবাজার ও মাসকলাইবাড়ি এলাকায় পুরসভার যে সমস্ত দোকান রয়েছে, সেগুলিও ভালো দামে বিক্রি করে দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রির পাশাপাশি দোকানভাড়া বৃদ্ধি, সম্পত্তিকর ও মিউটেশন আদায়ে জোর, পার্কিং জোন থেকে টাকা আদায় সহ একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। কিন্তু এভাবে কতদিন পুরসভার কাজকর্ম ঠিকঠাক চালানো যাবে, তা নিয়ে বোর্ডের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমনটাও শোনা যাচ্ছে, বকেয়া মিটিংয়ে পুরসভাকে ঘুরে দাঁড় করাতে কীভাবে আয় বৃদ্ধি সম্ভব, তার নকশা প্রস্তুত করতে বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্সি এজেন্সির সাহায্য নেওয়ার কথাও ভাবছে পুর কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল বলেন, পুরসভার নিজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যেই বোর্ড মিটিং ডেকে তা পাশ করিয়ে নেওয়া হবে।
পিএফের কোটি কোটি টাকা বকেয়া নিয়ে চেয়ারপার্সনের দাবি, গত এক বছর ধরে নিয়মিত পিএফ জমা পড়ছে। কিন্তু তার আগে পিএফের বেশ মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে এটা ঠিক। আমরা কিস্তিতে ওই টাকা মেটানোর জন্য পিএফ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিচ্ছি।
জলপাইগুড়ি পুরসভার পিএফ বকেয়া থাকার বিষয়টি নতুন নয়। পুরসভা সূত্রে খবর, মোটা টাকা বকেয়া না মেটানোয় বেশ কিছু বছর আগে পিএফ কর্তৃপক্ষের তরফে পুরসভার দু’টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ পর্যন্ত করে দেওয়া হয়েছিল। আবারও যদি সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে চরম সমস্যা দেখা দেবে। আর সেকারণেই তড়িঘড়ি পিএফের বকেয়া মেটাতে তৎপর হয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রে খবর, নিজস্ব তহবিল বাড়াতে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে গত একমাস যাবৎ বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাতে মিউটেশন ফি বাবদ ৩১ লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে। এই অভিযান জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ।