• ভারতী ঘোষের প্রয়াণে চোখে জল প্যাডলারদের
    বর্তমান | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: একটু বেশি বয়সে কলেজে পড়ার সময় টেবিল টেনিস খেলা শুরু করেছিলেন ভারতী ঘোষ। খেলোয়াড় জীবনে তাঁর উল্লেখযোগ্য সাফল্য ১৯৭১ সালে অসম রাজ্য চ্যাম্পিয়ন। সেই সাফল্যে পেয়ে যান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলে চাকরি। 


    সেখান থেকেই শুরু ভারতী ঘোষের কোচ হওয়ার লড়াই। সবসময়ই বলতেন, আমি বড় খেলোয়াড় হওয়ার জন্য টেবিল টেনিসে আসিনি। খেলা শিখে কোচ হওয়ার জন্য টেবিল টেনিস খেলা শুরু। গৃহকোণে আটকে থাকা মেয়েদের বাড়ির বাইরে আনাটাও একটাদিক ছিল আমার কোচ হওয়ার ক্ষেত্রে। 


    তবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান ও উপেক্ষিতদের প্রতিভার জোরে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। সেই লড়াইয়ে পুরোপুরি সফল ছিলেন তিনি। কারও বাবা নেই, মা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। কারও বাবা রিকশ চালান। এরকম দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের খুঁজে এনে খেলা শেখাতেন। শুধু কি তাই? তাদের পড়াশোনো খাওয়া-দাওয়া জামাকাপড়ের খরচও বহন করতেন তাঁর চাকরির বেতন দিয়ে। আর এ কারণেই বিয়ে করার কথা ভাবেননি কোনওদিন। 


    প্রায় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় এই লড়াই করে ঝাঁকে ঝাঁকে তারকা টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তৈরি করেছেন দরিদ্র পরিবার থেকে। নজর রেখেছেন সমাজে উপেক্ষিত, অবহেলিত শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের দিকেও। ভারতীদেবী তৈরি করেছেন শ্রবণ প্রতিবন্ধী টেবিল টেনিসের ওলিম্পিয়ান। পলি সাহা, শর্মিষ্ঠা হালদার, সোমা কুণ্ডু, প্রিয়ম চক্রবর্তী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী টেবিল টেনিসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক জিতেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় প্রিয় কোচের শেষ বিদায়ে তাঁরা সকলে কাঁদলেন। 


    মুন্নি লাহা বলেন, বাই আমার জীবনের সবকিছু। খেলা শেখানোর পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। একই কথা গণেশ কুণ্ডু, সুব্রত রায়, রাম ঠাকুর, কৌশিক দাসদের মতো ভারতী ঘোষের হাতে তৈরি ঝাঁক ঝাঁক খেলোয়াড়দের। পলি, শর্মিষ্ঠারা কথা বলতে পারেন না। তাই প্রিয় কোচ, অভিভাবককে শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাতে ফুল নিয়ে ভারতী ঘোষের বাড়ির সামনে তারা কেঁদেই চলেন। (ভারতী ঘোষ। - ফাইল চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)