• Haridevpur Murder Case : মায়ের কথা শুনেই অয়নকে ইটে থেঁতলে খুন প্রীতির?
    এই সময় | ০৯ অক্টোবর ২০২২
  • এই সময়: সাত বছরের ভাব-ভালোবাসা। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই অয়ন মণ্ডল এবং প্রীতি জানাকে একসঙ্গে দেখা যেত। কিন্তু সেই প্রেম সুখের হয়নি বেশি দিন। সম্পর্কে আসে তিক্ততা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই তা বেড়েছে। মাঝেমধ্যে দু'জনের প্রবল গোলমাল হতো। আর সেই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তেন পরিবারের সদস্যরা। তা বলে খুনোখুনি! ভাবতে পারছেন না দু'বাড়ির প্রতিবেশীরা।

    পুলিশ সূত্রের খবর, অয়নকে খুনে ইন্ধন জুগিয়েছেন প্রীতির মা রুমা জানা। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় বুধবার রাতে প্রীতির বাড়ি গিয়ে তাঁকে মারধর করেন অয়ন। এরপরে প্রীতি এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক নাবালক ইট ও বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে অয়নকে। দেহ কোথায়, কী ভাবে, লোপাট করতে হবে, তা ছকে দেন প্রীতির বাবা দীপক জানা। বাড়িতে ডেকে আনা হয় ওই নাবালকের বন্ধু রাহুল রায় এবং দীপজ্যোতি সাউকে। তাঁরা কবরডাঙা থেকে একটি ম্যাটাডর ভাড়া করে আনেন। চালক সুজিত রায়কে বলা হয়, বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হবে। তার পরে ত্রিপলে মুড়ে মগরাহাটে গিয়ে অয়নের দেহ ফেলে চলে আসে চক্রীরা। দেহ লোপাটের পর দীপজ্যোতি ওডিশায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কলকাতা থেকে প্রীতি এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গেই রাহুল ও সেই ম্যাটাডর চালককে গ্রেপ্তার করে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। শনিবার ওই নাবালককে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে তোলা হলে তাকে হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। দীপজ্যোতিকে কলকাতায় আনা হচ্ছে। বাকিদের আলিপুর আদালতে তোলা হলে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    বুকে ব্যথা, ছাদে লুকিয়ে আছি!

    রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় দীনেশ পল্লিতে থাকতেন বছর একুশের অয়ন। দশমীর রাতে তবলা নামে এক বন্ধুকে বাইকে চাপিয়ে প্রীতির বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। খালপাড়ের উল্টো দিকে মিনিট দশেকের রাস্তা। অয়নের বাইক নিয়ে তবলা ফিরে আসেন। কিন্তু অয়ন থেকে যান। রাতে তবলাকে আচমকা ফোন করে বলেন, 'বুকে ব্যথা করছে। আমি ছাদে লুকিয়ে আছি।' যেতে হবে কি না, জানতে চাইলে অয়ন বলেন, 'না, আমি ঠিক চলে যাব।' এর পর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। ফোন সুইচড অফ হয়ে যায়।

    বান্ধবীর 'নাটক'

    বুধবার রাতে ছেলে বাড়ি না-ফেরায় খুব একটা চিন্তিত হননি অয়নের মা মঞ্জু মণ্ডল। মাঝেমধ্যেই কোনও না কোনও বন্ধুর বাড়িতে ঘুমোতে চলে যেতেন অয়ন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেও ফোনে না পেয়ে চিন্তা শুরু হয়। জানা যায়, অয়নকে প্রীতির বাড়িতে ছেড়ে এসেছিলেন তবলা। এ ছাড়া সকালে ফোন করে মঞ্জুকে প্রীতি বলেন, রাতে তাঁর সঙ্গে অয়নের ঝামেলা হয়েছে। অয়ন কোথায়, তা-ও জানতে চান প্রীতি। কিছুক্ষণ পরে অয়নের বাড়িতেও চলে আসেন। অয়নের মায়ের সামনে রীতিমতো কান্নাকাটি করে আগের রাতে ঝগড়া ও মারধরের কথা বলতে থাকেন। অয়নের মা পাল্টা কিছু বললে দু'জনের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন প্রীতি। তখনও অয়নের খোঁজ মেলেনি। পুলিশের দ্বারস্থ হয় অয়নের পরিবার।

    Youth Missing Case: মিলল বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের দেহ, হরিদেবপুর থানার সামনে বিক্ষোভ

    হত্যালীলা বাড়িতেই

    পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, রাত ১১টা নাগাদ প্রীতির বাড়িতে মদ্যপ অবস্থায় গিয়েছিলেন অয়ন। ফোন করে তাঁকে ডেকেছিলেন তরুণীই। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁকে দেখতে না-পেয়ে প্রীতির মায়ের সঙ্গে গলা চড়িয়ে কথা বলতে থাকেন অয়ন। তাঁকে মারতেও যান বলে অভিযোগ। তখন ঘরে ছিল এক নাবালক। অয়নের তাণ্ডবে মেজাজ হারান প্রীতির মা। ঘরে উপস্থিত নাবালককেই বলেন অয়নকে মারতে। ততক্ষণে ফিরেছেন প্রীতিও। মায়ের নির্দেশে প্রীতি ও ওই নাবালক মিলে মারতে থাকে অয়নকে। প্রীতিদের বাড়ির একতলা তৈরি হয়ে গেলেও, উপরের দু'টি তলা নির্মীয়মাণ। অয়ন সেই নির্মীয়মাণ তিনতলার ছাদে পালিয়ে যান। সেখান থেকেই বন্ধুকে ফোন করেছিলেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের। কিন্তু তাঁকে যে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা হয়তো ভাবেননি অয়ন। ছাদে ফের তাঁকে খুঁজে বের করে আধলা ইট দিয়ে মাথার পিছনে বার বার আঘাত করা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। খালপাড়ে জনবসতি কম হওয়ায় এত ঘটনা টের পাননি কেউ।

    Haridevpur Case: মা-মেয়ে দুজনের সঙ্গেই সম্পর্ক? হরিদেবপুরের যুবক খুনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

    ম্যাটাডরে পাচার দেহ

    খুনের পর দেহ পাচার নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান প্রীতির পরিবারের সদস্যরা। পরিকল্পনায় মাথা খাটান প্রীতির বাবা দীপক। ওই নাবালকের দুই বিশ্বস্ত বন্ধুকে ডেকে আনা হয়। রাহুল এবং দীপজ্যোতি নামে দুই বন্ধু দু'হাজার টাকায় ম্যাটাডর ভাড়া করে আনেন। ম্যাটাডরে দেহ তোলার পরে ত্রিপল-চাপা দেওয়া হয়। এর পর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট থানা এলাকার মাগুরপুকুরে অয়নের দেহ ফেলা হয়। সিম খুলে ফেলে দেওয়া হয় মোবাইলটিও। পরের দিন সকাল থেকে সব কিছু স্বাভাবিক থাকার ভান করতে থাকেন সকলে। সেই নাটকের 'পরিচালক' যে প্রীতি এবং তাঁর মা-বাবা- তা বুঝতে পারেননি কেউ। এমনকী থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও সকলে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন। পুলিশের অনুমান, অয়ন মারা যাবেন, তা হয়তো প্রীতিরা বুঝতে পারেননি। কিন্তু তারপরের ঘটনাক্রম চলেছে পরিকল্পিত চিত্রনাট্য মেনেই।
  • Link to this news (এই সময়)