• বঁটি দিয়ে পিসি শাশুড়ির গোড়ালি কেটে ট্রলিতে পুরেছিল বৌমা? কুমোরটুলি ঘাট কাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
    এই সময় | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ঝগড়ার মুহূর্তে ইট দিয়ে থেঁতলে পিসি শাশুড়িকে খুন। কিন্তু দেহ লোপাট কী ভাবে? তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়ে ফাল্গুনী ঘোষ? অবশেষে মা আরতি ঘোষের সাহায্যে মৃত শাশুড়ির গোড়ালি কাটা হয় বঁটি দিয়ে। এরপর সেই টুকরো করা দেহ ট্রলিতে তুলে গঙ্গার ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় মা ও মেয়ে। কুমোরটুলি ঘাটে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

    মঙ্গলবার সকালে কুমোরটুলি ঘাট থেকে এক ট্রলি ভর্তি কাটা দেহ-সহ গ্রেপ্তার হয় দুই মহিলা। ধৃত আরতি ঘোষ এবং ফাল্গুনী ঘোষ সম্পর্কে মা-মেয়ে। মৃত সুস্মিতা ঘোষ (৫৫) ফাল্গুনীর পিসি শাশুড়ি, পুলিশি তদন্তে উঠে আসে এমনটাই। 

    ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, ফাল্গুনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না তার স্বামীর। তার শ্বশুরবাড়ি পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটে। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বীরেশ পল্লিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আলাদা থাকছিল ফাল্গুনী। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়ের কাছে এসেছিল মা আরতি। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ফাল্গুনীর বাড়িতে গিয়েছিলেন তাঁর পিসি শাশুড়ি সুস্মিতা। কেন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, ফাল্গুনীই হয়তো ফোন করে তাঁকে ডেকেছিল। 

    সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ শাশুড়ি সুস্মিতার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে ফাল্গুনী। সেই সময়েই দেওয়ালে ধাক্কা লেগে অজ্ঞান হয়ে যান সুস্মিতা। পরে তাঁর জ্ঞান ফেরার পরে ফের ফাল্গুনীর সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়। সেই সময়েই ইট দিয়ে শাশুড়ির ঘাড়ে এবং মুখে আঘাত করে ফাল্গুনী, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। 

    কিন্তু সুস্মিতার দেহ কী ভাবে লোপাট করা হবে? তা ভেবে ঘুম ওড়ে মা ও মেয়ের। এরপর বঁটি দিয়ে কাটা  হয় সুস্মিতার পায়ের গোড়ালি। সেই অবস্থাতেই দেহ ভরা হয় ট্রলি ব্যাগে। এরপর একটি ট্যাক্সি করে মা ও মেয়ে আসে কুমোরটুলি ঘাটে। উদ্দেশ্য ছিল, দেহ ভর্তি ট্রলি ব্যাগটি গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া। কিন্তু তার আগেই প্রাতঃভ্রমণকারী এবং স্থানীয়দের তৎপরতায় ধরা পড়ে মা ও মেয়ে। ইতিমধ্যেই উদ্ধার হওয়া দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। 

    এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে। সুস্মিতা কেন ফাল্গুনীর বাড়িতে গিয়েছিল? তাঁকে খুনের ছক কি আগে থেকেই কষা হয়েছিল? কেন পিসি শাশুড়ির সঙ্গে বচসা বাঁধল ফাল্গুনীর? তদন্তে নেমে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

    এ দিন ফাল্গুনীর বাড়িতে যান বারাসত পুলিশ জেলার এসডিপিও বিদ্যাগড় অজিঙ্কা আনন্ত। ফাল্গুনীর প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে মধ্যমগ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন মা এবং মেয়ে। পাড়ার কারও সঙ্গেই বিশেষ মিশত না তারা। প্রতিবেশীদের দাবি, অচেনা লোকজনের আনাগোনা ছিল ফাল্গুনীর বাড়িতে। এই নিয়ে প্রতিবাদও করেছিলেন পাড়ার লোকজন। বাড়ি ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল মা ও মেয়ের। 

  • Link to this news (এই সময়)