চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার
সম্প্রতি ভোটার তালিকায় ‘জল’ মেশানো নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে হইচই শুরু হয়েছে। ভুয়ো ভোটারের নাম ঢোকানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন।
রবিবার দিনহাটায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ এই বিষয় নিয়ে বিরোধীদের হাঁটুতে জল জমিয়ে দেওয়া এবং সরকারি আধিকারিকদের সূর্যের মুখ দেখতে না দেওয়ার নিদান দিয়েছেন। বিজেপিও ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশিদের নাম থাকার অভিযোগ করে সরব হয়েছে।
এই চাপানউতোরের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, কোচবিহারে গত এক বছরে প্রায় ৬৪ হাজার নতুন ভোটার বেড়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সবচেয়ে বেশি ভোটার বেড়েছে সীমান্তবর্তী শীতলখুচি বিধানসভা এলাকায়।
কোচবিহার জেলায় ন’টি বিধানসভা কেন্দ্র মিলে বর্তমানে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৯০ জন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০২৫–এর ১ জনুয়ারি পর্যন্ত কোচবিহারে ভোটার বেড়েছে ৬৩ হাজার ৭৮৫ জন। মাত্র এক বছরের মধ্যে এই বিশাল পরিমাণ ভোটার বেড়েছে।
পাশাপাশি ভুয়ো, মৃত ও অন্যত্র চলে যাওয়ার ভোটারের সংখ্যাটা ৩৪ হাজার ১৫১ জন। জেলার মধ্যে শীতলখুচি বিধানসভা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোটার বেড়েছে। সেখানে এক বছরে ১০ হাজার ৮১৪ জন ভোটার বেড়েছে।
তারপরই রয়েছে মাথাভাঙ্গা বিধানসভা এলাকায়। এখানে ভোটার বেড়েছে ৮ হাজার ৩৮৬ জন। তুফানগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ভোটার বেড়েছে ৮ হাজার ৫২ জন। যে তিনটি বিধানসভা এলাকায় ভোটার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে শীতলখুচি এবং তুফানগঞ্জ, এই দুটি বিধানসভাতেই বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে।
আবার জেলায় সবচেয়ে বেশি ভোটার সেই শীতলখুচিতেই বিধানসভায়। দ্বিতীয় স্থানে সীমান্তের আরেক বিধানসভা দিনহাটা। এরপর রয়েছে সীমান্ত ঘেঁষা সিতাই। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত যে যে বিধানসভা এলাকাগুলো পড়ছে, সেখানেই ভোটার বেশি করে বেড়েছে।
কোচবিহারে হঠাৎ করেই এত ভোটার বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় বৃদ্ধি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায়ের অভিযোগ, ‘সংখ্যালঘু এলাকায় প্রত্যেকটি বুথে অন্য জায়গা থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে। আর তাঁরা সকলেই সীমান্ত পেরিয়ে এসেছেন। ওপারেও তাঁদের নাম রয়েছে।’
তৃণমূল এই অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে বলে অভিযোগ তাঁর। পাল্টা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকে বিএসএফ। সীমান্ত পেরিয়ে যদি অনুপ্রবেশকারীরা আসে, তার দায় কেন্দ্রের। যদি কোনও এলাকায় বেশি কিংবা ভুয়ো ভোটার থাকে, তা খতিয়ে দেখা হবে। আন্দোলনও হবে।